ই-পেপার শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫

রমজানে বাড়বে চাহিদা
গ্যাস বিদ্যুৎ পানি সংকটের শঙ্কা
প্রকাশ: রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫, ১২:২০ পিএম  (ভিজিট : ১৯৪)

রমজান মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্টেকহোল্ডাররা। তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে গ্যাস সংকট রয়েছে। এই সংকট রমজান মাসেও পুরোপুরি কাটার সম্ভাবনা নেই। ফলে এর বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে কল-কারখানা ও আবাসিক গ্রাহকের ওপর। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে, রান্না করতে গিয়ে বিপাকে পড়বেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে দেখা দেবে লোডশেডিং। পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ চাহিদানুযায়ী রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সমস্যা হবে না।

তিতাসের আওতাধীন রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে আবাসিকে রান্না গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ অনেক পুরোনো। বিভিন্ন এলাকা থেকে তিতাস অভিযোগ কেন্দ্রে শত শত ফোন আসে প্রতিদিন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, পুরান ঢাকা, কলাবাগান, কাঁঠাল বাগান, ধানমন্ডি, বনশ্রী, খিলগাঁও, বসুন্ধরা এলাকা থেকে বেশি আসছে অভিযোগ।

তাদের অভিযোগ, কোথাও কোথাও রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস পেতে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। না হলে ভোরে উঠে রান্না করতে হয়। রমজানে এটি কোনোভাবে সম্ভব না। ফলে বিকল্প হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করতে হবে। এতে মাসের খরচ বাড়বে।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে চলমান গ্যাস সংকট সহসাই কাটছে না। দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ পেলে মোটামুটি চাহিদা মেটানো যায়। শুক্রবার সরবরাহ করা হয়েছে ২৪০ কোটি ঘনফুট। রমজানে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়বে। গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাত। এবার বিদ্যুৎ খাতে গত বছরের চেয়ে বাড়তি সরবরাহ করা হবে। ফলে শিল্পেরও চাহিদা পুরোপুরি মেটানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়লে শিল্প আরও চাপে পড়বে। তাই আবাসিকে সরবরাহ কিছুটা বাড়লে পরিস্থিতি উন্নতির তেমন সুযোগ নেই। রমজানে সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এক কার্গো এলএনজি আনা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো এবং আবাসিকে বর্তমানের চেয়ে সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, একটু একটু করে গরম পড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রমজান। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। রজমান মাসজুড়েই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলে রমজানে কোনো লোডশেডিং হবে না। এ ছাড়া এখনও গরম পুরোপুরি পড়েনি। ফলে চাহিদাও সেভাবে বাড়েনি। শুক্রবার দেশে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ উৎপাদিত হয়েছে ১০ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, আর ইভিনিং পিক আওয়ারে উৎপাদিত হয়েছে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল সকাল ৯টায় ১৫০ মেগওয়াট। তাই শিগগিরই লোডশেডিং হওয়ার সম্ভবনা নেই। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা বলছে, রমজানে পানির চাহিদা কিছুটা বাড়ে। চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করা হবে। পাম্পগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে পানির ঘাটতি হবে না। লাইন মেইনটেনেন্সের জন্য কোথাও কোথায় সাময়িক সংকট দেখা দিতে পারে।

তিতাস গ্যাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৯৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চাহিদা দিয়েছে তিতাস। প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি। এখন তারা সরবরাহ পাচ্ছে ১৫৫ কোটি ঘনফুট।

ঢাকা ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেছেন, রমজানে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পেলে কোথাও পানির সংকট হবে না। তবে পানির লাইন মেইনটেনেন্সের কারণে কোথাও কোথাও পানি সরবরাহে সাময়িক বিঘ্ন হতে পারে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে ১২০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হবে। বাকি খাতগুলোতে বর্তমানের মতো সরবরাহ থাকবে। এর জন্য রমজান মাসে এলএনজির একটি কার্গো বাড়তি আনা হচ্ছে। এতে আবাসিক খাতে সরবরাহ কিছুটা বাড়তে পারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেছেন, রমজান ও গরমে কোনো লোডশেডিং হবে না। এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির নিচে নামানো যাবে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যাপক চাপ থাকা সত্তে¡ও গত ছয় মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি সরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সরকারকে দেয় ৮.৯০ টাকা। অথচ সরকার কেনে ১২ টাকায়।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, শুধু রমজান নয়, প্রতিদিন চাহিদানুযায়ী গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। গ্রাহক বাসায় চাহিদানুযায়ী গ্যাস পান না অথচ প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল দিতে হচ্ছে। এটি অন্যায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সেই চাহিদানুযায়ী সরবরাহ বাড়ানোর ইচ্ছায় গলদ রয়েছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close