ই-পেপার মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫

নির্বাচনের চাপ আরও বাড়াবে বিএনপি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:২৬ এএম  (ভিজিট : ৩৯৮)

সংসদ নির্বাচনের আগে কোনোভাবে স্থানীয় নির্বাচন করতে দেবে না বলে সংকল্প করেছে বিএনপি। বর্ধিত সভা থেকে নেতারা দ্রুত নির্বাচন দিতে সরকারকে চাপ দেওয়ার কথা জানান। অর্থাৎ দলটির নেতারা চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চান। এর কোনো বিকল্প দেখছেন না তারা। শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতা নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ছাড়া বর্ধিত সভায় উঠে আসে দলের অভ্যন্তরীণ নানা দিক। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করে হাইকমান্ড।

বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের এলডি হলের মাঠে বিএনপির এই বর্ধিত সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনিও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন লন্ডন থেকে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ছয় স্তরের সাড়ে তিন হাজারের বেশি নেতা এই বর্ধিত সভায় অংশ নেন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্য, সব মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব রয়েছেন। ২০১৮ সালের পর অনুষ্ঠিত এই সভায় অনেকেই বক্তব্য রাখার আগ্রহ পোষণ করেন। তবে সময়-স্বল্পতা এবং আগ্রহী অনেক বেশি হওয়ায় বক্তব্য দিতে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিএনপি। আগ্রহীদের মধ্য থেকে প্রথমে নাম জমা নেওয়া হয়। পরে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় ভাগ্যবান বক্তব্য দানকারীর তালিকা। এর বাইরেও বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব উপস্থিত ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যেসব নেতা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তারাও অংশ নিয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্যরাও অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

বর্ধিত সভা থেকে বেরিয়ে বিএনপি নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। কোনোভাবেই আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে দেবেন না তারা। ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো মূল্যে সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এর বিকল্প নেই। এজন্য যা যা করা দরকার সবই করতে প্রস্তুত আছেন বলে হাইকমান্ডকে জানান তৃণমূলের নেতারা। তারেক রহমান সবার কথা শোনেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করেন। পরে তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর তপু সময়ের আলোকে জানান, দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দিতে লটারি দেওয়া হয়। লটারির মাধ্যমে উপজেলা পর্যায় থেকে ১৫-২০ জনের মতো নেতা বক্তব্য রাখেন। আর জেলা থেকে বক্তব্য রাখেন ৮-১০ জন। সবার জন্য তিন মিনিট করে সময় দেওয়া হয়। নেতারা তাদের বক্তব্যে তৃণমূলের গ্রুপিংসহ সংগঠনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজস্ব বলয় নিয়ে এলাকায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এতে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যাতে স্থানীয় সংগঠনকে অবহিত করে এলাকায় কার্যক্রম চালায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হাইকমান্ডকে অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলদারির বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন নেতারা। তাদের ভাষায় চাঁদাবাজির সঙ্গে দলীয় পদধারী নেতারা জড়িত নন। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপির ব্যাজ ধারণ করে অপকর্মগুলো করেছে। এদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভায় জামায়াত প্রসঙ্গে অনেক নেতা কথা বলেন। জামায়াত বরাবরই ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা আঁতাত করে এর আগেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাদের থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন নেতারা। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল সময়ের আলোকে বলেন, দলের শীর্ষনেতাকে কাছে পেয়ে তৃণমূলে সংগঠনের বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছেন। দ্রুত নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নেতারা। এ ছাড়া কোনোভাবেই যেন স্থানীয় নির্বাচন আগে না হয় সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। মনোনয়ন দেওয়ার আগে যাতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়; সেদিকে জোর দেন সবাই। বর্ধিত সভায় বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

বর্ধিত সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ এক সংকট সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সবাইকে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন, এ জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আপনাদের এতদিনকার সংগ্রাম আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সবসময় শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ।

খালেদা জিয়ার আগে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করা হবে বলে জনগণ মনে করে।


জাতীয় নির্বাচনের জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত’ করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, মাফিয়া প্রধানের পালানোর পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়তো ঘনিয়ে আসছে। তাই দলকে কোনো ব্যক্তি নয় বরং দলকে এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে আপনারা প্রস্তুত করুন। সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার আহ্বান, আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, আপনারা যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখুন। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগণের সমর্থন চাই, চাই সবার সহযোগিতা।তারেক বলেন, যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ হবেন—ব্যক্তির চেয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাকে বাধ্য হয়েই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা দলের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কাজকে বিএনপি বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।

তারেক বলেন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্র এবং সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। তারেক বলেন, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ও মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণও হয়ে উঠেছে। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের মাঝে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর কর্ম অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে তৃণমূল নেতারা বক্তব্য রাখেন। বর্ধিত সভার মূল মঞ্চে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বসেন। ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে যুক্ত হন স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন।

এদিকে বাইরে থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং দেশের ভেতর থেকে একটি পক্ষ গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্ধিত সভার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে করব তারেক রহমানের নেতৃত্বে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দক্ষতার সঙ্গে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ডান-বামকে এক জায়গায় এনে ৩১ দফা দিয়েছেন।

এর আগে কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বর্ধিত সভা শুরু হয়। দেশের চলমান পরিস্থিতি, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখা—এই চার এজেন্ডা সামনে রেখে এবারের বর্ধিত সভা ডাকা হয়। বর্ধিত সভার প্রথম সেশন দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরু হয় বিকালে। এ সেশনটি হয় রুদ্ধদ্বার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে দলের বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সভার পর ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়।


আরও সংবাদ   বিষয়:  বিএনপি   সংসদ নির্বাচন   বর্ধিত সভা   তারেক রহমান   খালেদা জিয়া  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close