ই-পেপার শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫

গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানিতে তোপের মুখে বিইআরসি
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:০২ পিএম আপডেট: ২৬.০২.২০২৫ ১০:২৯ পিএম  (ভিজিট : ১৩৫)

শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানি আয়োজন করে অংশীজনদের তোপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি।

রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর এই গণশুনানি শুরু হয়। শুনানি চলাকালে এ কার্যক্রমকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে হট্টগোল করেন এতে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা। তারা আগামী রোববারের মধ্যে দাম বৃদ্ধির আবেদন খারিজ না করলে আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। 

এর আগে শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনসহ (পেট্রোবাংলা) দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আগামী রোববারের মধ্যে খারিজ করার দাবি জানিয়ে প্রতিনিধিরা বলেন, দাবি না মানলে এ আবেদন আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। এর আগে সকালে পেট্রোবাংলা ও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদনের ওপর শুরু হয় বিইআরসির শুনানি। আবেদনে শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণিতে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। 

তবে এর তীব্র বিরোধিতা করে তারা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ালে হুমকির মুখে পড়বে বিনিয়োগ-ব্যবসা-বাণিজ্য আর শিল্প খাত। যার ফলে সার্বিকভাবে ব্যাহত হবে দেশের অর্থনীতি।

দুপুর ১২টায় শুরু হয় জেরা পর্ব। প্রথমেই জেরা করতে আসেন ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, এই অযৌক্তিক প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া উচিত হয়নি। এইভাবে আমদানি করে শুধু জ্বালানি নয়, সব পণ্য আমদানি করে দেশটিকে আমদানি নির্ভর করে ফেলা হচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ভয়ংকর গণবিরোধী। এই প্রস্তাবের ওপর কোনো গণশুনানি হতে পারে না। এটি বন্ধ করতে হবে। এ সময় ‘প্রহসণের শুনানি বন্ধ করো, করতে হবে, মানি না, মানব না।’ এই স্লোগান দিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

বক্তব্যের শেষে তিন দফা দাবি জানিয়ে শামসুল আলম অবশিষ্ট পর্ব থেকে ওয়াকআউট করেন। তার বক্তব্যের পর সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য দিতে আসেন।

আর তখনই কিছু শিল্প মালিকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। তারা শুনানি বন্ধের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিইআরসি চেয়ারম্যান বারবার তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও হট্টগোল চলতে থাকে। এ সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আগামী রোববারের মধ্যে খারিজ করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, দাবি না মানলে এ আবেদন রূপ নিতে পারে আন্দোলনে। কয়েক মিনিট এভাবে চলার পর নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট আগে মধ্যহ্ন বিরতির ঘোষণা দিয়ে হল রুম থেকে বের হয়ে যান চেয়ারম্যান।

দুপুর ২টায় পুনরায় শুনানি শুরু হয়। শুনানি গ্রহণ করেন বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সদস্য মিজানুর রহমান, ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শাহীদ সারোয়ার।

গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা অবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হলে শিল্পায়ন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে শুনানি বাতিলের দাবিতে একই ভবনের নিচে মানববন্ধন করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। একই সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে প্রহসন দাবি করে শুনানি বয়কট করেন তারা। এ সময়, অন্তর্বর্তী সরকারের গণশুনানি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নয় বরং গ্যাসের চুরির বিরুদ্ধে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ক্যাবের সদস্যরা। একই সঙ্গে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে থাকলে, সিএনজি স্টেশন বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন তারা। 

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে ক্যাবের মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, একলাফে তিন গুণ দাম বৃদ্ধি হলে নতুন কোনো শিল্প হবে না। সরকারকে প্রয়োজনে এখন ভর্তুকি দিতে হবে, দাম বাড়ানো যাবে না। মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, বিইআরসির কাজ হওয়ার কথা গ‍্যাস–বিদ‍্যুতের দাম কমানো। কিন্তু তারা দাম বৃদ্ধি নিয়ে শুনানি করছে।

এর আগে, ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ওই শুনানি স্থগিত করার দাবি জানিয়েছিল ক্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গত ১৫ বছর শুধু মূল্যহার নির্ধারণের কাজ করেছে। বর্তমানেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মূল্যহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিইআরসি। এখন তারা গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করেছে। বিদ্যুতেরও শুরু করা হবে।

এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিইআরসিতে চিঠি দিয়েছিল ক্যাব। তাতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি, এলপিজি, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ সরবরাহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় কতটা সমন্বয় হয়েছে, তার পরিমাণ বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে।

লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা রোধ করে এবং সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার এবং ভর্তুকি কী পরিমাণ কমানো সম্ভব, তা বিইআরসির হিসাব করতে হবে। জ্বালানি-সংক্রান্ত অপরাধীদের বিচারের জন্য বিইআরসি আইনের আওতায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close