প্রকাশ: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৩২ পিএম (ভিজিট : ৩০০)

এক যুগ হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও এখনও তার অস্তিত্ব বিদ্যমান। বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল অংশজুড়ে আছেন তিনি। বইমেলায় কত কত লেখকের কত যে নতুন বই আসে, তবুও ভিড়ের মাঝে সবার নিশানা হুমায়ূনের বই। তার লেখাগুলো এখনও পাঠক আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে। পাঠকনন্দিত এই লেখক চলে যাওয়ার পর এখনও শূন্য পড়ে আছে তার সিংহাসন। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, কবে আসবেন আরেকজন হুমায়ূন। প্রকৃতি পেয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। এ বসন্তে হুমায়ূনের বইয়ের চাহিদাও নেহাত কম নয়। গতকাল ছিল এবারের অমর একুশে বইমেলার ষোড়শ দিন। শুক্র-শনি বন্ধের দিন শেষে গতকাল ভিড় একটু কম ছিল। তবে মেলায় পাঠক সংখ্যা একেবারে কম নয়। আর হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পাঠকদেরও সমাগম যথেষ্ট।
হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে কথা হয় অন্য প্রকাশের স্টল ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা সবচেয়ে বেশি বই আছে আমাদের প্রকাশনীতে। প্রায় ৭০ শতাংশ বই আমাদের প্রকাশনীতে আছে। বাকিগুলো আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনীতে। বরাবরের মতো হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি ভালো। এবার হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসটি অনেক বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন স্টক আউট হয়ে যাচ্ছে।
অনন্যা প্রকাশনী থেকে মেলার স্টল ইনচার্জ ফারুক হোসেন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের বিক্রি বরাবরই ভালো। আমাদের স্টল থেকে ময়ূরাক্ষী আর হিমু সমগ্র বেশি বিক্রি হচ্ছে। স্টলে হিমু সমগ্র শেষ হয়ে গেছে।
হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে কথা হয় আসাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন লেখক, যার বইয়ের লেখাগুলো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার উপন্যাসের বই থেকে সিনেমা হয়েছে। তার উপন্যাসের ছোট বাক্য এখনও আলোচিত। তিনি একাধারে নানাগুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি মন দিয়ে লিখতেন তাই তার লেখা এত চমৎকার।
হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পাঠক সবুজ আহমেদ। তার সঙ্গে কথা হলে জানান, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের একজন রতœ ছিলেন। তার লেখা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়। এমন আরেকজন হুমায়ূন কবে আসবেন কে জানে!
হুমায়ূন আহমেদের বই সম্বন্ধে আরেক পাঠক শরিফ বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তার লেখার মাধ্যমে আমাদের মাঝে একটা বড় ছাপ রেখে গেছেন। এখনকার লেখকদের কাছ থেকে খুব একটা ভালো লেখা পাওয়া যায় না। কিছু কিছু লেখকের ভালো লেখা আছে যা খুব কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয়। বরাবরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের বই কিনেছি। উপহার দিয়েছি। হুমায়ূন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি।
ফরিদ নামে এক পাঠক বলেন, লিখতে হলে পড়তে হবে, জানতে হবে। সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষের জীবন উপলব্ধি করতে হবে। হয়তো হুমায়ূন স্যার সেটি পেরেছিলেন। তাই তার বই আমাদের কাছে টানে।
রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলা ১৬তম দিন। এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায় এবং চলে রাত ৯ট পর্যন্ত। গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৪টি। মেলার ১৬তম দিন পর্যন্ত মোট বই ১৫৩১টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : গতকাল বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জহির রায়হানের সাহিত্যকর্মে ঐতিহাসিক ঘটনার বিচার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহল আহমদ। আলোচনায় অংশ নেন মশিউল আলম এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব হাসান।এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৭
লেখক বলছি মঞ্চ : গতকাল লেখক বলছি, অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গবেষক সুমন সাজ্জাদ এবং শিশুসাহিত্যিক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠান: আজ সোমবার অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : আল মাহমুদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মজিদ মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেবেন মুসা আল হাফিজ এবং কাজী নাসির মামুন। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব সাদিক।
বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির অভিযোগে দুটি স্টল বন্ধ : অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন ও বিক্রি করায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দুটি স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড স্টে-সেইফ বইমেলায় পরিচালনা করছিল এ স্টল দুটি।
রোববার সন্ধ্যায় মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মুক্তমঞ্চের পাশে অবস্থিত স্টল দুটি কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী প্রাণ-আরএফএল গ্রæপকে ১৪ ফেব্রæয়ারি একটি চিঠি পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, শুরুতে কোনো সমস্যা না থাকলেও ১১ ফেব্রæয়ারির পর কিছু ইসলামপন্থি গ্রুপ স্যানিটারি ন্যাপকিনকে ‘গোপন পণ্য’ আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য বিক্রি বন্ধের দাবি জানায়। পরদিন আরও অনেকে একই দাবিতে এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসার এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় পরিস্থিতি সামলানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৩ ফেব্রæয়ারি স্টলগুলো পুনরায় চালু করা হলে কিছু গোষ্ঠী সরাসরি বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ জানায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মব ঘটনার আশঙ্কায় স্টল দুটি বন্ধ করা ‘অপরিহার্য’ বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় শিশু শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে স্টল প্রতিস্থাপনের সুযোগ রাখা যেতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এই চিঠিতে নোট লিখে জানান, ‘এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। অতি দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে রোববার গণমাধ্যমকে অধ্যাপক আজম বলেন, ‘বইমেলায় খাবার ও পানীয় ছাড়া অন্য কিছু বিক্রি করার অনুমতি নেই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ইভেন্ট ম্যানেজার এসব দোকান অনুমোদন দিয়েছে। তাই সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘এটি কোনো বিশেষ পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’
তবে চিঠিতে শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে স্টল পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কেন তা করা হলো- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘শিশু কর্নারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সেখানে পেস্ট-ব্রাশসহ অন্যান্য পণ্য রাখায় সেটিও বাতিল করা হয়েছে।’ তবে সমালোচকরা বলছেন, আগের বছরগুলোতেও বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয়েছে, তখন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে এবার বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে।