৫ আগস্ট বাংলাদেশে এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়, যার সাক্ষী গোটা বিশ্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার থেকে যে আন্দোলনের শুরু তা এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পৌঁছায়। ‘লং মার্চ টু ঢাকা’য় লাখো মানুষের সমাবেশে যে সফল গণঅভ্যুত্থান রচিত হয়, তা অভাবনীয়। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার আত্মত্যগ। এখনও শরীরে স্লিপ্রন্টার, গুলি নিয়ে হাসপাতালে বা ঘরে কাঁতরাচ্ছেন অগণিত মানুষ।
জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন চলাকালে দেশজুড়ে যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়ন এবং সার্বিক খোঁজখবর রাখার কাজ করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ আন্দোলন চলার সময়ে বা পরে নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। দৃষ্টি হারিয়েছেন হাজারের বেশি। তাদের অধিকাংশই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, নানারকম হতাশায় ভুগছেন। অভ্যুত্থানে আহতদের নিয়ে মঙ্গলবার সময়ের আলোর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিবেদনটি থেকে জানা গেছে, ঢাকার ভেতরের ১৭টি সরকারি হাসপাতালে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আহতদের সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে, দুজন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। অনেককেই বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিদেশ থেকে বেশ কয়েকটি চিকিৎসক দল আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বাংলাদেশে এসেছিল।
এদিকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, নামমাত্র কিছু সাহায্য পেয়েছি। এভাবে আর কত দিন। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না। কিন্তু আমরা কি এমন অবহেলার জন্যই বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম? কেউ কেউ ধারদেনা ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্ধ কিংবা এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অন্য চোখে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তাদের। অনেকের ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারপরও তারা ‘সুচিকিৎসা’র দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন।
আন্দোলনে আহত রোগীরা বা তাদের পরিবার-পরিজন নিঃসন্দেহে এক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা গেছে। বিশেষ করে কতটা সুস্থ হবে এবং তাদের কে দেখবে, পরিবার ও সংসার কে দেখবে বা কীভাবে চলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি রয়েছে। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সরাসরি টিভিতে দেখেছেন তাদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে একটি অধিদফতর গঠন করা দরকার। তার আওতায় নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য যা যা করণীয় সে ব্যাপারে সরকার আরও আন্তরিক হবে, সে প্রত্যাশা রইল।