সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের রুপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্টির জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা যেমন আজোও নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষা আজ পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আঞ্চলিকও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাঙ্খিত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ জনগোষ্ঠির চিকিসা সেবা প্রাপ্তির জন্য বিদেশ গমন প্রবণতায় এখনো রয়েছে উচ্চ হার। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা অদ্যাবধি সার্বজনীন জনবাস্তব হয়ে উঠেনি। স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি দেশের জনগনের অন্যতম মৌলিক অধিকার এই কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজও প্রত্যাশিত মাত্রায় উপনীতি হতে পারেনি।
সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইউনির্ভারসেল হেলথ কাভারেজ এর আলোকে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রুপরেখায় ২৬তম ধারায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী বিএনপি সবার জন্য স্বাস্থ্য এই নীতির ভিত্তিতে উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে সকলের জন্যে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যুক্তরাজ্যের যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচএস বা এই জাতীয় সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইউনির্ভাসেল হেলথ কাভারেজের আলোকে। সকলের জন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তাবনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দারিদ্র বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধা বঞ্চিত হৃদ দরিদ্র জনগনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করব। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্ধ জিডিপি ৫% এর কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যাক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ, পল্লী স্বাস্থ্য কর্মীর ব্যবস্থা করা হবে।সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে কুক্ষিগত করার ফলে ‘চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবণতি, বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার’ ঘটেছে বলে অভিযোগও করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী।
বিএনপির প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপক উন্নয়নে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় স্বল্প মেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমরা গ্রামীন স্বাস্থ্য সহকারি নিয়োগের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে সেবার গুনগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে রুপান্তর, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনার কথা আমরা বলেছি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি। তবে আমরা আশা করি না যে, তারা এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখে বা সেই সময় পর্যন্ত তারা থাকবে।
ছাত্র-জনতা বিপ্লবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ওই আন্দোলন আহতদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থার দাবিও জানান খন্দকার মোশাররফ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।