প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৪৮ এএম (ভিজিট : ৯৬)
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হ্যাঙ্গারের ইজারামূল্য অত্যধিক। দীর্ঘদিন ধরে তা কামানোর জন্য বিমান মন্ত্রণালয় ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে অ্যাভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।
অবশেষে বরফ গলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতের বিকাশ এবং রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে হ্যাঙ্গারের ইজারা মূল্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক। সর্বশেষ বোর্ড সভায় এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় পুনর্নির্ধারণ কমিটি ভাড়া কমিয়ে নতুন ইজারামূল্য প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হলেই ইজারামূল্য কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সভায় বোর্ড সদস্য (পরিকল্পনা) জানান, বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতের বিকাশ, সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়নে অ্যাভিয়েশন খাতের অবদান বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তথা বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির জন্য ইজারামূল্য নির্ধারণের সময় জেনারেল অ্যাভিয়েশনের ১৫ বছর পে-ব্যাক পিরিয়ড ভিত্তিতে ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রকল্প ডকুমেন্টের তথ্য মতে, হ্যাঙ্গারের আয়ুষ্কাল পঞ্চাশ বছর যাতে ফায়ার অ্যাপ্রোন এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যার সঙ্গে জেনারেল অ্যাভিয়েশন হ্যাঙ্গারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে হ্যাঙ্গারের ইজারার হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি নির্ধারিত হয়।
এ ছাড়াও হ্যাঙ্গার নির্মাণ করার সময় এর উচ্চতা অনেক বেশি করা হয় যেন অনেক বড় ধরনের এয়ারক্রাফটও রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। ফলে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা ইজারার হারকে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও জেনারেল অ্যাভিয়েশন হ্যাঙ্গার রানওয়ে-১৪ থেকে খুব কাছে অবস্থিত এবং হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণে কেবল পূর্ব পার্শ্বে সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। ফলে, হেলিকপ্টার উড্ডয়নে ও অবতরণে অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য এয়ারলাইন্সগুলো হেলিকপ্টার পরিচালনায় অতিরিক্ত জ্বালানি খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলোর সামগ্রিক পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জেনারেল অ্যাভিয়েশন শিল্প রক্ষার্থে ও বেবিচকের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান ইজারার হার পুনর্নির্ধারণ করা সমীচীন।
সভায় বলা হয়, নবনির্মিত ১০টি হ্যাঙ্গারের মধ্যে ৮টি হ্যাঙ্গার ইজারা প্রদান করা হলেও হ্যাঙ্গারের সুবিশাল এলাকা এবং উচ্চতা অধিক হওয়ায় ইজারামূল্যের হার তুলনামূলক বেশি এবং দেশের সামগ্রিক অ্যাভিয়েশন ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ কিছু ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হ্যাঙ্গারের ইজারা বাতিল করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ ছাড়াও অ্যাভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) হতে ইজারামূল্য কমানোর জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে হ্যাঙ্গারের ইজারামূল্য পুনর্নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রস্তাব হচ্ছে, প্রতি বর্গফুট ইজারার ভিত্তিমূল্য হবে ৪০ টাকা, ২০২৪ জুলাই থেকে ২০২৫ জুন পর্যন্ত ইজারা মূল্য হবে প্রতি বর্গফুট ৪১ টাকা। প্রতি বছর বার্ষিক বৃদ্ধির হার হবে ২.৫ শতাংশ। ২০২৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত ইজারামূল গিয়ে দাঁড়াবে ৪৬ টাকা ৩৯ পয়সা। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ২.৫ শতাংশ হারে ইজারমূল্য বাড়তে থাকবে। এই হারে ইজারা মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। সভায় বেবিচক চেয়ারম্যান এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন।
এ ছাড়া সভায় হ্যাঙ্গার প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৫ তলা ভবনটির নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলা জেনারেল অ্যাভিয়েশন টার্মিনাল বিল্ডিং হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়, যেন হেলিকপ্টারের যাত্রী ৯ নম্বর গেট দিয়ে সরাসরি প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারে। সভায় আইকাও এর গাইড লাইন অনুসারে আলাদা হেলিপোর্ট নির্মাণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউ-এস বাংলার মহাপরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের দেশে নন-এরোনটিক্যাল চার্জ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এটা কমানোর জন্য আমরা বরাবরই রেগুলেটরি অথরিটির কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী দেশের অ্যাভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ শিগগিরই উদ্যোগ নেবে। হ্যাঙ্গারের ইজারামূল্য কমালে, আমাদের পরিচালন ব্যয় কমবে। তখন ভাড়া কিছুটা হলেও কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, হ্যাঙ্গারের ইজারামূল্য পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে অনুমোদিত হলে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সময়ের আলো/এএ/