প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৫ এএম (ভিজিট : ১০৪)
গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি, সরকারি খাসজমি, নদীর পাড়সহ বনের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। রাতের আঁধারে ট্রাকের মাধ্যমে এই মাটি পাচার করা হচ্ছে ইটভাটা ও নির্মাণকাজে। এতে একদিকে যেমন কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এ চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারের শীতে ও শুষ্ক মৌসুমি মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। বিশেষ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মাটির ব্যবসা চলছে। কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাটি। বিশেষ করে বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায়।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীপুরের ভেরামতলী এলাকায় সংরক্ষিত বনের পাশে অবাধে মাটি কাটছে কয়েক দিন ধরেই। মাটির গাড়ির চাপে নূহাশপল্লী ও বারতোপা সড়কের একটি কালভার্টও ভেঙে গেছে। মাটিবাহী গাড়ির চাপে নষ্ট হচ্ছে আঞ্চলিক সড়ক। সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে মাটি কাটার কারণে হুমকি মুখে পড়েছে গাজীপুর সাফারি পার্ক। শ্রীপুরের রাথুরা মৌজার ভেরামতলী ও বেতজুরি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দেদার মাটি বিক্রি করছে তরুবিথী পিকনিক স্পট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
খোলা জমি থেকে ৩০-৪০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছে তারা। এ ছাড়াও শ্রীপুরের বদনীভাঙ্গা, গাজীপুর, নিজমাওনা, আক্তাপাড়া, তেলিহাটির তালতলী, উত্তরপেলাইদ, কাওরাইদ, বরমী ও গোসিঙ্গা এলাকায় দৌরাত্ম্য চলছে মাটি ব্যবসায়ীদের। মাটি পরিবহনের ডাম্প ট্রাকের অতিরিক্ত ওজনে আঞ্চলিক সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটি কারবারি চক্রটি বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাজ।
ভেরামতলী এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বনের পাশ থেকে কোথাও বনের ভেতর থেকে রাতের বেলায় চোরাইভাবে মাটি কাটে। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হুমকি দেয়।’
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাথুরা মৌজার রাথুরা বিটের অধীনে যেভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে তা কখন বা কীভাবে করছে তা বুঝতে পারছি না। আমার পার্কের সীমানক প্রাচীর ঘেঁষে যেভাবে করে মাটি কাটা হয়েছে তাতে যেকোনো সময় পার্কের প্রাচীর ধসে যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, এভাবে অবৈধভাবে মাটি কাটার মাটির উপরিভাগে থাকা পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে ওই জমিতে চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে পানি সংকটের কারণ হতে পারে এ ছাড়াও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও মাইক্রোঅর্গানিজমের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে মাটির প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের আইনে উল্লেখ আছে নিজের জমি থেকেও কেউ মাটি কেটে বিক্রি করাও আইননত দণ্ডনীয় অপরাধ।
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভেরামতলী এলাকায় মাটির গাড়ি প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার ইউএনও ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
সময়ের আলো/এএ/