ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উচ্ছেদ নোটিসেই দায়িত্ব শেষ!
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩৫ এএম  (ভিজিট : ৭৮)
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা সদরের হাজিরহাট বাজার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া জারিরদোনা শাখা খালের দুই পাড় দখল করে বহুতল মার্কেট, দোকানঘর ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। একসময় এ খালই ছিল মহাজনি নৌকা চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু খালটির হাজিরহাট বাজার এলাকার এক কিলোমিটার অংশ এখন অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে চরফলকন ও হাজিরহাট ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগের শিকার হন খাল পাড়ের মানুষ। পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার ফসলহানিসহ ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। এসব ক্ষতির দিক বিবেচনায় নিয়ে খালটি উদ্ধারে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সবশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দখলদারদের নোটিস দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত অবৈধ ৮০ দখলদারকে নোটিস জারির দুই বছর অতিক্রম হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন নোটিস দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দখলদারের কাছে উপজেলা প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, হাজিরহাট বাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ এই খাল উদ্ধারের নামে কোনো বাণিজ্য হচ্ছে না তো? কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় দখলমুক্ত করা হচ্ছে না খাল। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য নোটিস দিয়েই চুপসে গেছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ইউএনওর বদলির খবরও আসতে শুরু করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনও আসে আর যায়, প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, জারিরদোনা খালের দুই পাড়ের ৮০ জন দখলদারকে চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদে নোটিস প্রদান করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।

হাজিরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও চরফলকন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শম্ভু লাল মজুমদার বলেন, জারিরদোনা খালের দুই পাড়ের দখল হয়ে যাওয়া ভূমির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির জেলা আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান ধনু বলেন, সরকারি খাল প্রভাবশালীদের থাবায় জর্জরিত। প্রায় প্রতিদিনই খাল গিলে খাচ্ছে তারা। দোকান ও হোটেলের পচা-দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা খালে ফেলে দখল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে অবৈধ দখলদাররা।

হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য খোরশেদ আলম, রাজন মেম্বার, জসিম, সৌরভ, সোহেলসহ স্থানীয় আরও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ খালটি দখলমুক্ত করতে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি তুলেছেন। তারা জানান, সত্তর দশকে উপজেলার চরলরেন্স, হাজিরহাট, চরফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নের কৃষকদের সুবিধার্থে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে জারিরদোনা খালটি খনন করা হয়।

১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৪০ ফুট প্রস্থের খালটি মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ওই সময় ইউনিয়নগুলোতে ইরি ধান চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখা ও ছেড়ে দেওয়ার সুবিধার্থে খালের শেষ মাথায় মেঘনা নদীর কাছাকাছি অংশে একটি সুইসগেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নব্বই দশকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে প্রভাবশালীদের থাবায় দখল-দূষণে খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসে। বর্তমানে খালটির হাজিরহাট বাজার ঘেঁষে এক কিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে। প্রভাবশালীরা খালের দুই পাশ দখল করে বহুতল মার্কেট, দোকানঘর ও আবাসিক ভবনের পাশাপাশি নির্মাণ করেছেন ব্যক্তিগত ১৮টি বক্স কালভার্ট। ৪০ ফুট প্রশস্ত খালের কোনো কোনো অংশে এখন পাঁচ ফুটও অবশিষ্ট নেই। বেশ কয়েকটি স্থানে বাজারের প্রতিদিনের বর্জ্য নিয়মিত খালের পাড়ে স্তূপ করে রাখা হয়। এভাবে কৌশলে ময়লা ফেলে খাল ভরাট করে তা দখল করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাজিরহাট বাজারের উত্তর অংশের ১০০ মিটারের মধ্যে হাজি মোতাহের হোসেন সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ওই মার্কেটে ভাড়ায় দোকান নিয়ে এলডি পরিবহন ও সামির এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আল মোস্তফা মঞ্জিল, জাহাঙ্গীর মঞ্জিল, এ্যানি ভিলা নামের অসংখ্য বহুতল ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে খালটির বিভিন্ন অংশ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আবাসিক ভবনও। খাল দখল করে সাহাবউদ্দিন রনি নামে এক ব্যক্তি একাই করেছেন পাঁচটি দোকান ঘর। প্রতিটি ভবন, মার্কেট ও দোকান ঘরের সামনে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে অন্তত ১৮টি কালভার্ট। আর এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও দখলে গোপন আঁতাত করে স্থানীয় হাজিরহাট ও চরফলকন ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে খাল দখল করে ভবন ও বক্স কালভার্ট নির্মাণের কথা স্বীকার করে হাজি মোতাহার হোসেন সুপার মার্কেটের মালিকের পক্ষে তার নাতি সোহেল সরদার বলেন, আমরা সব ওয়ারিশরা মিলে মার্কেটটি নির্মাণ করেছি। খালের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ করলেও পানি নিষ্কাশনের পথ সচল রাখা হয়েছে। আরেক দখলদার আল মোস্তফা মঞ্জিল ভবনের মালিক মো. মোস্তফা জানান, তিনি একা নন, তার মতো অনেকেই খালের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

অন্যদিকে অবৈধ দখলদারের তালিকায় সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা সাহাবউদ্দিন রনি জানান, তার সেখানে খালের জমি কম দখল হয়েছে। তবুও সরকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলে দখল ছেড়ে দিতে তার অসুবিধা নেই। তবে এ বিষয়ে সংবাদ না করতে অনুরোধ করেন তিনি।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close