প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:২৭ এএম (ভিজিট : ৯৬)
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিখ্যাত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে এখন বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পড়েছে বিশাল চর। ক্রমাগত পানি কমায় বেড়েই চলেছে চরের বিস্তৃতি। পদ্মায় পানি না থাকায় এখন বিশাল চরে বিভিন্ন ধরনের কৃষিজাত ফসলের চাষ হচ্ছে। চলতি বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে গাজর চাষ করে রীতিমতো বাম্পার ফলন পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের উচ্চতা বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে মাস তিনেকের জন্য নদীতে পানি থাকলেও বছরজুড়েই তলানিতে থাকে পানি। পদ্মায় যে পানি থাকে তা কোনো কাজেই লাগে না। বেশিরভাগ সময়েই একেবারে নাগালের বাইরে থাকে এই পানি যা দিয়ে সেচের কাজও করতে পারেন না কৃষকরা।
এদিকে প্রমত্তা পদ্মা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জেলেদের একটি বড় অংশ বেকার হয়ে পড়েছেন। কথা হয় জেলে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, যারা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের এখন বড়ই দুর্দিন। ইতিমধ্যে অনেকেই পদ্মা নদী থেকে নৌকা ও জাল গুটিয়ে নিয়েছে। তারা মাছ শিকার না করে দিনমজুরি করছেন। আবার অনেকে অটো ভ্যান ও রিকশা চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, গাজরের বাম্পার ফলনের জন্য বিভিন্ন জাতের বীজ চাষ করে থাকেন স্থানীয় কৃষকরা। গাজর চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর গাজরের আবাদ বাড়ছে এখানে। এ বছর গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে অতিমাত্রায় মুনাফা না হলেও কৃষকদের লাভ ভালোই হচ্ছে। গাজর চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে কৃষি বিভাগ।
পরিবেশবিদ আতাউর রহমান বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই নদী বাঁচাও আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবে মূল বিষয়টি হলো ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গঙ্গাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি একতরফাভাবে সরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে পদ্মা থেকে শুরু করে এর শাখা-উপশাখা নদীগুলো শুষ্ক মৌসুমের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর।
সরেজমিন দেখা যায়, এক সময়কার ভরা যৌবনা পদ্মা নদী শুকিয়ে ধুধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দুই পাশে যতদূর চোখ যায় দেখে মনে হয় যেন মরুভূমি! পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা-উপশাখা নদীগুলোও শুকিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ছোট নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের খাল-বিলও শুকিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই নাব্যতা হারিয়ে ফেলে খরস্রোতা পদ্মা। অনেক আগেই পদ্মা প্রায় পানিশূন্য হয়ে গেছে। বর্তমানে পদ্মায় পানি থাকলেও নেই কোনো স্রোত। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই পদ্মার পানিশূন্য হয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়েছে পদ্মার শাখা নদী ও খাল-বিলে। পদ্মার মতোই নামকরা নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এবার বৈশাখ আসার আগেই যতটুকু পানি পদ্মায় রয়েছে তাও আর দেখা যাবে না।
স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব পাশে লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মাঝখানে পদ্মার চরে গাজর চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের গাজরের ভালো ফলন হয়েছে।
বিঘাপ্রতি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে গাজর বিক্রি হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গাজর আবাদের খরচ বেড়েছে। কৃষককে গাজরের বীজ বেশি দামে কিনতে হয়েছে। পাশাপাশি কৃত্রিম সার সংকটের কারণে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গেছে। গাজর আবাদের শুরুর দিকে তীব্র খরার কারণে দ্বিগুণ সেচ দিতে হয়েছে। গাজর চাষে আগে খরচ হতো সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। এবারে হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা।
একদিকে সার ও বীজের মূল্যবৃদ্ধি অন্যদিকে বিদেশ থেকে গাজর আমদানির কারণে কৃষকরা দেশীয় গাজরের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। গাজর চাষিদের কেউ কেউ আগাম গাজরের দাম পেয়ে খুশি। আবার অনেকেই সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
সময়ের আলো/এএ/