ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চোখের আলো নিভে আসে
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:১৭ এএম  (ভিজিট : ১১৪)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০-এর গোলচত্বরে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম। ৩০ বছর বয়সি এ তরুণ বর্তমানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে ডান চোখেও কম দেখছেন। দুটি চোখেরই আলো নিভে আসার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

তিনি সময়ের আলোকে জানান, আহত হওয়ার পর এ পর্যন্ত আমার চোখে তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাম চোখে এখনও ঝাপসা দেখি। চোখের ভেতরে গুলি আছে। ধীরে ধীরে ডান চোখেও কম দেখছি। ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি না। চোখের ব্যথায় এখন ঘুমাতে পারি না। আহত হওয়ার পর থেকেই আয়-রোজগার বন্ধ। পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। নামমাত্র কিছু সাহায্য পেয়েছি। এভাবে আর কত দিন। কেউ কোনো খোঁজখবর নেয় না। কিন্তু আমরা কি এমন অবহেলার জন্যই বন্দুকের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম? আমরা এখন পর্যন্ত অনেক আশ্বাস পেয়েছি, তবে কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি।

পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিরাজগঞ্জের তাঁত শ্রমিক মো. ইমরান। গত ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তিনি জানান, আহত হওয়ার পর প্রথমে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর ঢাকার আরেকটি হাসপাতাল ঘুরে গত ১৪ ডিসেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে ভতি হন।

মো. ইমরান সময়ের আলোকে বলেন, আন্দোলনে আমার মতো অনেকেই পঙ্গু বা খোঁড়া হয়ে গেছে, কেউ পা-চোখ-হাত হারিয়েছে। আবার অনেকেই মারা গেছেন। আমরা ৬ মাস ধরে হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছি। কিন্তু সুচিকিৎসা যেমন পাচ্ছি না তেমননি আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছি না। অথচ রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল আমাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে এখানে যে চিকিৎসা পাচ্ছি, তা পর্যাপ্ত নয়। ভালো চিকিৎসা না হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমরা পরিবারের বা অন্য কারও বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। আমাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।শুধু আন্দোলনে আহত এ দুই রোগী নন, তাদের মতো আরও অনেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা নিজ বাড়িতে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পরিবারের বোঝা হয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ ধারদেনা ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের কারও কারও বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন শুকায়নি। শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। হাত-পা অচল হয়ে গেছে। অন্ধ কিংবা এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অন্য চোখে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তাদের।

গত শনিবার রাত থেকে রোববার রাত পর্যন্ত এ দুদিন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে রাজধানীর মিরপুর রোডের শিশুমেলার কাছে তিন রাস্তার মোড়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাতে সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পরে বিক্ষোভকারীরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূনের বাসভবন যমুনার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে রাত ২টার দিকে সরে যান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। এর আগেও গত বছরের ১৩ নভেম্বর জুলাই আন্দোলনে আহতরা উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) অর্থাৎ পঙ্গু হাসপাতালের সামনের প্রায় ১৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছিলেন। সে সময় মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গভীর রাতে তারা সড়ক ছাড়েন।

তাই আন্দোলনে আহত রোগী-স্বজন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মধ্যে আহতদের সুযোগ-সুবিধার জন্য কেন বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে- এমন প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

আহতরা অনেকেই বলেছেন, উন্নত চিকিৎসা আমার অধিকার, এটা চাইতে হবে কেন? গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের রক্তের ওপরেই এ সরকার ক্ষমতায় বসেছেন। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সরকার গঠনের পরপরই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অথচ আন্দোলনে আহতদের দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা ছিল না, যা দেশের জন্য লজ্জাজনক, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল।
যদিও কেউ কেউ আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যর্থতার জন্য সরকারের আমলাতান্ত্রিকতাকে দায়ী করেছেন।

তবে আহতরা বলেন- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা কী করছেন, কী খাচ্ছেন, কোথায় থাকছেন- সেই খবর কেউ নিচ্ছে না। আমরা যারা আহত হয়েছি, তাদের সবার চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। যাকে বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, তাকে পাঠাতে হবে। যদি সবাইকে পাঠানো সম্ভব না হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

গত রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের সহায়তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতরা ৫-৬ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এতে তাদের ওপর যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটি প্রশমনে আমরা যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। আন্দোলনের ট্রমার কারণে নির্দিষ্ট সময় পরপর আহতদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হচ্ছে।

এর আগেও গত ১৪ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আহতদের দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে বলা হয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। অথচ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। আর এজন্যই তাদের বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। এ সংগঠনের উদ্যোগে শহিদদের পরিবারকে এবং আহতদের অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এটি গাইডলাইন আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে আন্দোলনে আহত হয়ে যারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের আজীবন ভাতা দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও আজীবনের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়াও আহতদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহতের তালিকার প্রথম ধাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে অধিদফতরের ওয়েবসাইটে। খসড়ায় নিহত হিসেবে ৮৫৮ জন এবং আহত হিসেবে ১১ হাজার ৫৫১ জনের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৭৩৭ জন নিহতের তথ্য পেয়েছে তারা। সেই সময় পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ৯০৭ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গণআন্দোলনে নিহত এবং আহতদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসে (ম্যানেজমেন্ট অব ইনফরমেশন সিস্টেম) হালনাগাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৭৩৭ জন নিহতের তথ্য রয়েছে এবং এগুলো যাচাই করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলনে আহত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৭ জনের নাম। আর নিহত শহিদের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে ৮৪৪ জনের নাম। এ ছাড়াও গত ১৫ জানুয়ারি নিহতদের তালিকার গেজেট প্রকাশ হলেও আহতদের তালিকার কোনো গেজেট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল সূত্রে জানা গেছে, তালিকায় এবার নামের সঙ্গে অন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ছবিযুক্ত করার কাজ চলছে। আগে শহিদদের তালিকায় ছবির বাধ্যবাধকতা ছিল না। সেই কারণে গেজেট নোটিফিকেশন ছিল যথেষ্ট। আহতদের ক্ষেত্রে তাদের নামের সঙ্গে ছবি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই ছবি আপলোডের সময়সীমা ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়াও তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে সাহায্য করার জন্য ছবির পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আগের পেশার তথ্য আমরা যুক্ত করতে চেয়েছি, যেন ডাটাবেজ তাদের পুনর্বাসনে সাহায্য করতে পারে। সরকারের সব মন্ত্রণালয়, অধিদফতরসহ সব সংস্থা মিলে, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে বলেও গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেলের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। আর বিদেশে চিকিৎসার জন্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ খরচ শুধু ১৫ জনের জন্য। এর মধ্যে একজনের পেছনে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বেশি। আহতদের সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। আবার অনেককেই বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আর গত কয়েক মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বেশ কয়েকটি চিকিৎসক দল আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বাংলাদেশে এসেছিল।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই গণহত্যায় আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়নি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতরা যেন সর্বোত্তম চিকিৎসা পান, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেশে না থাকলে অবশ্যই আহতদের বিদেশে পাঠানো হবে। আবার প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও চিকিৎসক আনা হবে। তারা বলেন, এ সরকার একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে কাজ শুরু করতে হয়েছে। সেজন্যই চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সাহায্য করতে কিছুটা সময় লাগছে।

আন্দোলনে আহতদের ৭ দাবি মধ্যে ছিল- ২৪-এর যোদ্ধাদের হত্যা ও আহত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার। ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণপূর্বক গ্রেফতার। আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন। আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আহত এবং শহিদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আহতদের আর্থিক অনুদানের অঙ্ক বৃদ্ধিসহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টা সুসংহত করতে হবে।

এ ব্যাপারে আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়াদের একজন হলেন আমিনুল ইসলাম। তিনি গত ১৯ জুলাই মালিবাগে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর থেকেই পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

তিনি সময়ের আলোকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত মানুষদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখাননি। আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কবে সুস্থ হতে পারব সেটাও অনিশ্চিত। পরিবারের জন্য আমি বোঝা হয়ে গেছি। আমার মতো আরও যারা আছেন, তাদের সবার চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।

আন্দোলনে আহত চিকিৎসা দেওয়া প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, এজন্য মূলত সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায়ী। সরকার অনেকটাই আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে। তেমনি সরকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনও পতিত স্বৈরশাসকের দোসররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ফলে ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না সরকার। কিন্তু বিপ্লবী সরকার হলে এমনটি হতো না। যেহেতু বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়নি তারা একটা নিয়মের বেড়াজালে আটকে গেছে।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে তাদের যে ত্যাগ রয়েছে চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল সরকারের। যদিও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কাজ করছে। কিন্তু তাদেরও কিছু লিমিটেশন রয়েছে। আবার অনেকেই আহতদের নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন অনেকেই আছেন তারা অনেক আগেই সুস্থ হয়ে গেছেন। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু হাসপাতাল ছাড়ছেন না। আবার অনেকেই ফেক বা ভুয়া আহতের পরিচয়পত্র দিয়ে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছে। ফলে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবুও আহতের সুচিকিৎসার জন্য যা যা করণীয় সেই ব্যাপারে সরকারের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।

আহত চিকিৎসার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা গবেষণায় দেখেছি, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীরা বা তাদের পরিবার-পরিজন নিঃসন্দেহে এক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নতা দেখা গেছে। বিশেষ করে কতটা সুস্থ হবে এবং তাদের কে দেখবে, পরিবার ও সংসার কে দেখবে বা কীভাবে চলবে- এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি রয়েছে। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো সরাসরি টিভিতে দেখেছেন তাদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। ভয় তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কারও কারও বেলায় এটি অনেক দিন স্থায়ী হয়। কাউন্সেলিং করতে হবে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে হবে। আর যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন রাষ্ট্রের উচিত তাদের দায়িত্ব নেওয়া। এখন কীভাবে দায়িত্ব নেবে সেই কর্মপন্থা বের করতে হবে। কারণ তারা যদি সঠিক চিকিৎসা না পায় তা হলে তাদের ভবিষ্যতে অন্ধকার নেমে আসবে তাদের জীবনে। হতাশা কাজ করবে। সুতরাং আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে এমন আন্দোলন আবার হতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আবুল কেনান সয়য়ের আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবা দিতে। আন্দোলনে আহত অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার এখনও ৯৭ জন জটিল রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাদের অনেকের সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে যারা ভর্তি আছেন তারা চিকিৎসা পাননিÑএ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি।

আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে বারবার কেন আন্দোলনে নামতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আন্দোলনে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও অনেকে চিকিৎসাধীন। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আহতদের অনেকেই ৫-৬ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফলে তাদের ওপর একধরনের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটি প্রশমনে আমরা যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারিনিÑ এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। এ জন্যই আহতরা ক্ষোভে আন্দোলন করছে। কিন্তু আমরা কখনোই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কার্পণ্য করিনি।

তিনি বলেন, এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলার সমস্যা, ঋণের বোঝা ছিল। তবুও আহতদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এটি গাইডলাইন আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে আন্দোলনে আহত হয়ে যারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের আজীবন ভাতা দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও আজীবনের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে অনেকের ভেতর কষ্ট আছে এবং কষ্ট থাকতে পারে। আমরা সেগুলোর ওপর শ্রদ্ধাশীল। বিদেশে গমন এবং উচ্চতর চিকিৎসার ব্যাপারে যেসব আবেদন থাকবে সেগুলো আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেব। আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।


সময়ের আলো/এএ/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close