দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই সন্তোষজনক নই। রীতিমতো খারাপ সময় পার করছে অর্থনীতি। তবে একমাত্র রফতানি আয় আশা জাগাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। টানা চার মাস ধরে ৪ বিলিয়ন মানে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রফতানি হচ্ছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৪৪৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) পণ্য রফতানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এদিকে ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ফলে এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরের আগের ছয় মাসের মধ্যে প্রথম তিন মাস প্রবৃদ্ধি খুবই কম হলেও পরের তিন মাসে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেমন, জুলাই মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এছাড়া জুলাই-আগস্টে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, জুলাই-সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ, জুলাই-নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জুলাই-ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রফতানি বেড়েছে। তবে চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানি কমেছে। কিন্তু রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি যেহেতু তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে, সেহেতু এই খাতের রফতানি ওপরই নির্ভর করে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি। এই খাতে জানুয়ারি মাসের রফতানি ৫ দশমিক ৫৭ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও এর কাছাকাছিই রয়েছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে গত জুলাই ও আগস্টে পণ্য রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছিল। সেপ্টেম্বরে অবশ্য ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়; রফতানি পরিমাণ ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। তার মধ্যে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও নভেম্বরে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। আর ডিসেম্বরে ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৮ শতাংশ।
এদিকে রফতানি আবার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এই রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে ৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়। এই রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া শুধু জানুয়ারিতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ৯ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে পৌনে ৫ শতাংশ কম।
তৈরি পোশাক রফতানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলারে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এ আয় ছিল ২ হাজার ১০২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এ আয় ছিল ১ হাজার ১৩২ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
এ ছাড়া ১ হাজার ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এ আয় ছিল ৯৭০ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
এদিকে, সদ্যবিদায়ী জানুয়ারি মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে। আর ২০২৪ সালে এ আয় ছিল ৩৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ১৮৫ কোটি ২ ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা বছর ব্যবধানে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ১৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।