উৎসাহ—উদ্দীপনা আর উচ্ছ্বাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে সরস্বতী পূজা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতীপূজার আয়োজন হলেও এই পূজার অন্যতম আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। পূজা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নগরীর নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নামে ঐতিহ্যবাহী এ হলটিতে। উৎসবের আমেজ নেমে আসে পুরো জগন্নাথ হলে জুড়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর আরাধনায় পূজা অর্চনার মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবারের মতো এবারও হলের খেলার মাঠের চারিদিক দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পূজার আয়োজন করেছে। প্রত্যেকটি মন্ডপেই শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং আগত অতিথিদের ভিড়।
অন্য বছরের মত এবারও এ হলের পুকুরের মাঝে বসানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।
এছাড়া হল প্রাঙ্গনজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইন্সটিটিউট ও বিভাগ বিভিন্ন ধারণা ও থিম নিয়ে নিজস্ব স্বকীয়তায় নিজ নিজ মণ্ডপ ফুটিয়ে তুলে।
এর মধ্যে ব্যতিক্রমী এক থিমের আদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পূজা মন্ডপটি তৈরি করা হয়। মন্ডপ সম্পর্কে এ বিভাগের শিক্ষার্থী বাঁধন দেব সময়ের আলোকে বলেন, এ বছর আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে এমন একটি থিম ধরা হয়েছে যা মানুষকে ভাবাবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বাংলাদেশে আছে কিনা? আদিবাসীদের উপর যে নিপীড়ন হয় সেটা আমরা ফুটিয়ে তুলেছি। মন্ডপে দেখা যাচ্ছে একটি ধনেশ পাখি, মাদল ও একটি মাটির কলস কলস এগুলোকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এবং কিছু কিউআর কোড দেয়া হয়েছে যা স্ক্যান করলে দেখা যাচ্ছে আদিবাসীদের উপর নিপীড়নের সংবাদ।
এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এবারের পূজায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী বিনয় ব্যাপারী সময়ের আলোকে বলেন, আমার ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের চতুর্থ তম পূজা ছিল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু শঙ্কা থাকলেও পুরোপুরি উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এইবারের পূজা। এবার এত বড় আয়োজন বন্ধুদের নিয়ে এসেছি পূজা দেখতে।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ পূজার আয়োজন পরিদর্শন করতে এবার এসেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পূজার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, জগন্নাথ হল কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি, বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনগুলোর পক্ষ থেকে ৭২ টি এবং জগন্নাথ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যুবাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মন্ডপের আয়োজন করা হয়েছে । এ পর্যন্ত বিনা বাঁধায় সকলের সহযোগিতায় পূজা চলছে।