ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা কি যাবে না?
প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪২ এএম  (ভিজিট : ২১৮)
জন্মের পর থেকেই সিন্ডিকেট শব্দটি শুনে এসেছি। সিন্ডিকেট শব্দটির আমদানি কবে থেকে শুরু হয়েছে? তা অনেকেরই অজানা। রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, মাছ-মুরগি, চাল-ডাল, সবজির দাম চড়া। এসব কিছুর মূল্য সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বাধা। সব সরকারই বলে ‘আমরা সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করব’, পারে না। সরকার, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকের অনেকেই ব্যবসা করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

একটি হিসাব দেওয়া যেতে পারে। আলুর দাম প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা এক সপ্তাহ আগের মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮৫ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা এক সপ্তাহ আগের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৩০ টাকা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এই হিসাবে একটি ভারসাম্য রক্ষার চিত্র পাওয়া গেলেও বাজারের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন ধরনের। টিসিবি যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে গত বছরের তুলনায় আলু ৩০ শতাংশ দামে বেশি বিক্রি হচ্ছে।

একেক বাজারে একেক দামে পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। হাত ঘুরে যে দ্রব্যটি একজন বিক্রেতা থেকে অন্য বিক্রেতার হাতে আসে তাতে দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ-তিনগুণ। বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগের। চালের দাম অনেক চড়া। মিনিকেট ও নাজিরশাইল প্রতি কেজি চাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। প্রতি কেজি মোটা ও মাঝারি চালের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতি কেজি মোটা চালের মূল্য প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৬ টাকা। শুকনা মরিচ ও জিরার প্রতি কেজি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা ও ছোট এলাচির দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। পরিসংখ্যানের হিসাবে বাজারদর যাচাই করা সঠিক নাও হতে পারে। এটি হয় অল্প কিছু মানুষের বসবাস করে। এলাকাভেদে দাম ওঠানামা করে।

সিন্ডিকেটের টিকিটি ধরা কি এত সহজ? দেশে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া তো কিছুতেই থামছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের জীবনে দুঃসহ হয়ে পড়েছে। সেদিকে তো নজর দিতে হবে। বাজার দর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের দিকে নিয়ে আসার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। চিনি, পেঁয়াজ, আলু, চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এ মুহূর্তে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি। সিন্ডিকেট ভাঙা সত্যি কি কঠিন কাজ? পণ্য পরিবহন সিন্ডিকেট ও যাদের হাত ঘুরে বাজারে পণ্যসামগ্রী আসছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না হলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা পারে না এমন কিছু নেই। প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ।

মিল মালিকরা বলে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে। বাস্তবে কিছু মিল মালিক চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বাজারে চাল সরবরাহ করা হয়। সরকারি চাপ বেশি থাকলে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে, অন্যথায় ইচ্ছেমতো চালের দাম বেড়েই যায়। ধান সব করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে কিনে নিয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি চালের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একজন সাধারণ মজুরের কাছে ১০ টাকা, ২০ টাকা অনেক কিছু। কৃষিবিপণন অধিদফতর জানিয়েছে, ২০২০ সালে প্রতি কেজি মাঝারি বোরো ধানের পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা ছিল। ২০২৩ সালে এই মূল্য প্রতি কেজি ১২ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু খুচরা চালের দাম বাড়ে ৪২ শতাংশ, তা হলে দেখা যাচ্ছে তথাকথিত সিন্ডিকেটের কারসাজি অনেক দূর প্রসারিত। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে কি?

প্রথমে ধান সংগ্রহ করে দীর্ঘদিন মজুদ করে রাখা হয়- তারপর ক্রাইসিস তৈরি হলে বাজারে ধান থেকে চাল করে অদের ইচ্ছেমতো মূল্য বেঁধে বাজারে ছাড়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান আকারে বড় ও ক্ষমতাবান। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে সহজে। এদের ঠেকানোর একটি কৌশল আছে সরকার যদি বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে পারে তা হলে এদের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব। বাজার মনিটরিং কিংবা অভিযান পরিচালনা করে এসব সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। 
আগে থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা কষ্টসাধ্য। ডলারের বিপরীতে এই আমদানি করতে হয়। প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২৩ টাকা নির্ধারিত। প্রতি কেজি চালের মূল্য কিছুটা বেড়ে প্রতি কেজি ৬২ টাকার হওয়ার কথা হিসাবমতো। কিছু ক্ষেত্রে চাল কিংবা ধান আমদানি করা নিয়মনীতি নীতিমালায় আটকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা প্রয়োজন।

বিগত সরকারের আমলে সিন্ডিকেট তেলের বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সিন্ডিকেটে কারা থাকে তা সবার জানা। আসলে সিন্ডিকেট বলতে কি বোঝায়? খুঁজে পাওয়া গেল, ‘একটি সিন্ডিকেট হলো ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন, বা সংস্থাগুলোর একটি সুসংগঠিত গোষ্ঠী যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসা লেনদেন করার জন্য, একটি ভাগ করা স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচার করার জন্য গঠিত হয়।’

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অস্বস্তি ও দুরবস্থা চলমান। যারা পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে বিক্রেতার কাছে তাদের জবাব জিনিস বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। চিনির বস্তা তিনশ টাকা। চাল-ডালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মুরগি বিক্রি হয়, মুরগির গিলা-কলিজাও আলাদাভাবে বিক্রি হয় বাড়তি দামে। বিক্রেতাদের বক্তব্য, সবকিছু আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মানুষের আয়-রোজগার কমেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে চলতে হয় সবার। সাধারণ মানুষকে অনেক সময়ে তালিকা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসটাও বাদ দিতে হয়।

শুল্ক কর এ মুহূর্তে কমেছে। বড় মিল মালিক/সিন্ডিকেটের তৎপরতা থেকে বের হতে চাইলে চাল আমদানির বিকল্প ছাড়া অন্য ব্যবস্থা এ মুহূর্তে নেই। সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হলে সফলতা আসবে। না হলে কিংবা শৈথিল্য দেখা দিলে ব্যর্থ হতে হবে। সাধারণত সব দায় পড়ে সরকারের ওপর। জনগণ, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মিলেই সরকার। সরকার বাজার তদারকি পর্যালোচনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালককে সদস্য সচিব করে এক টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক/প্রতিনিধি, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা/ প্রতিনিধি, মৎস্য কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা/প্রতিনিধি, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও দুজন ছাত্র প্রতিনিধি। সব স্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সততা দিয়ে কাজ শুরু করলে সফলতা আসবে একশ ভাগ আশা করা যায়।

কিন্তু কাজ হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। একজন সাধারণ মানুষ যে নুন আনে পান্তাও তার কাছে জরুরি খাদ্য। খাদ্য নিরাপত্তার দিকও প্রয়োজনীয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের ওপর বাজার সিন্ডিকেটের নানা ফন্দি-ফিকির বন্ধ হলে দেশে অস্থির ও নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হবে না। এ মুহূর্তে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারছি কি না তার ওপর। মানুষ যদি তার সাধ্যের মধ্যে তার দ্রব্যসামগ্রী যদি ক্রয় করতে পারে স্বস্তি ফিরে আসবে। সরকারের সব উন্নয়ন চাকা সচল হবে- এর তো বিকল্প নেই।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close