ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ
কাজ না করেই ২২ কোটির বিল
প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:০০ এএম  (ভিজিট : ৪৮২)
‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ (জোন-এ)’ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিল দেওয়া যাবে না এবং টাকা ফেরত চলে যাবে এমন আশঙ্কায় কাজ শেষ হওয়ার আগে ও মালামাল সরবরাহ না নিয়েই আটজন ঠিকাদারকে কমপক্ষে ২২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল পরিশোধ করেছেন গণপূর্তের ই/এম-৩ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মঈনুল হক।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দুই-তিন দিনে খাতা-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল পরিশোধ করে কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য করা হয়েছে। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও সেটি এখনও অনুমোদন হয়নি। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন অগ্রিম হিসেবে ১২ কোটি টাকা ‘আইবাস’ খরচ দেখানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্থাটিতে কাজ শেষ করার পরও বিলের জন্য ঠিকাদাররা যেখানে বছরের পর বছর ঘুরছেন সেখানে কাজ না করেই অগ্রিম বিল নেওয়ার ঘটনায় অনেকেই হতবাক হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন গত ৩১ ডিসেম্বর আজিমপুরে বহুতল মেকানিক্যাল কার পার্কিং শেড নির্মাণকাজের জন্য জেনারেটর সরবরাহ ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের জন্য ঠিকাদারকে ৭ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ঠিকাদার ৭ কোটি টাকা বিল নিলেও শুধু জেনারেটর সরবরাহ করেছেন, যার মূল্য প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের কন্ট্রোল বুথ, কন্ট্রোল বেকার ও কেবলসহ আনুষঙ্গিক মালামাল এখনও সরবরাহ করেননি। 

একইভাবে আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের সিকিউরিটি লাইটিং সিস্টেমের মালামাল সরবরাহ পাওয়ার আগেই ঠিকাদারকে ৬ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। একজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর তড়িঘড়ি করে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ৩১ ডিসেম্বর চেক দিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়। আজিমপুর কলোনি এলাকায় গিয়ে সরেজমিন দেখা যায় এখনও কোনো মালামাল সরবরাহ করেনি ঠিকাদার। কার্যত খাতা-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে যা দুর্নীতি। এ মালামালগুলো এনার্জি প্লাস কোম্পানি থেকে আনা হবে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই আমানত এন্টারপ্রাইজকে ৪ কোটি টাকা অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বাউন্ডারি লাইট না বসিয়ে অগ্রিম ২ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোমল্যান্ডকে, অর্ধেক ক্যাবল বসানোর পর কম্বাউন্ড এন্টারপ্রাইজকে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আর অর্ধেক ক্যাবল সরবরাহের পর ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মাসুদ নামের একজন ঠিকাদারকে। 

অন্যদিকে অভি নামের একজনকে প্রায় ২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আটজন ঠিকাদারকে কাজ করার আগেই মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে অগ্রিম ২২ কোটি টাকারও বেশি অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাহী প্রকৌশলী-ই/এম-৩ এবং সংশ্লিষ্ট উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীরা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে আরডিপিপিতে কাজগুলো গুডসে না করে ওয়ার্কসে পাস করা হয়েছে।

একাধিক প্রকৌশলী জানান, গুডসে হলে লেসে কাজ করা যেত। তা না করে ওয়ার্কসে কাজ করায় প্রতিযোগিতা তেমন একটা থাকবে না এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে। অভিযোগের বিষয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মালিক খসরুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কথা বলার যথাযথ কর্তৃপক্ষ নন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মঈনুল হক সময়ের আলোকে বলেন, কাজ শেষ না করেই বা মালামাল না পেয়েই সব বিল দেওয়া হয়নি। তবে কিছু আংশিক বিল দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মেনেই বিল দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, মেকানিক্যাল কার পার্কিং নির্মাণকাজের প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলেও আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই তা অনুমোদন হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলমগীর খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।


সময়ের আলো/এএ/




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close