প্রকাশ: সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৪৭ এএম (ভিজিট : ২৮২)
অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় সুবিধা করতে না পারলেও বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে আশায় বুক বেঁধেছে জামায়াতে ইসলামী। পটপরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার দলটির লক্ষ্য ভোটের মাঠে ভালো করা। এমনকি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ফাঁকে নির্বাচনের শতভাগ প্রস্তুতি সারতে চান তারা। ৩০০ আসনেই সমান প্রস্তুতি নিতে চায় দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে আসনভিত্তিক দল সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। যারা এরই মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তৎপরতা বাড়াচ্ছেন। এমনকি সক্রিয় হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করতেই এ ধরনের একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।
মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতা সময়ের আলোকে জানান, কেন্দ্র থেকে তাদের মাঠ গোছানো, এমনকি মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী জেলায়-উপজেলায় কাজ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সামাজিক মাধ্যমেও সোচ্চার হচ্ছেন তারা। সেখানে গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতিবাচক দিকগুলো তারা তুলে ধরছেন।
সম্প্রতি বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে বাদানুবাদ করছেন জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর যেখানে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, সেখানে জামায়াত আরও ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। হাতিয়ার হিসেবে সামনে আনছে বিএনপির অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো। জবাবে বিএনপিও ঘায়েলের চেষ্টা করছেন মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের বিতর্কিত ইস্যু দিয়ে।
ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনের সবকটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত ইসলামী। ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির মো. বদরউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত শনিবার কেন্দ্র থেকে ফরিদপুরের সবকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলা নিয়ে চারটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে ফরিদপুর-১ আসনে ঢাকা জেলা শাখার শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর ড. ইলিয়াছ মোল্লাকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণ করা হয়েছে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সোহরাব হোসেনকে ফরিদপুর-২ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।
ফরিদপুর-৩ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আবদুত তাওয়াবকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। ফরিদপুর-৪ আসনে ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ভাঙ্গা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একইভাবে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের একাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলে এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ সময়ের আলোকে বলেন, ৩০০ আসনেই আমাদের প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেক জায়গায় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সবাই সামনে আসবেন। ইতিমধ্যে তাদেরকে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য যা যা করা দরকার সবই করছেন তারা। মূল কথা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা মাঠে যাচ্ছি। বিগত সময়ে ফ্যাসিস্টের কারণে জনগণের সঙ্গে যে ফারাক তৈরি হয়েছে তা ঘুচিয়ে আনছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত কীভাবে নির্বাচন করবে তা ভোটের আগে সিদ্ধান্ত হবে। এখন ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করছি। ইসলামি জোট গড়তেও কাজ করছি। বিএনপিও চেষ্টা করছে ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানতে। আমরাও চাচ্ছি ইসলামি আন্দোলনসহ সবাই আমাদের ইসলামি জোটে আসুক। এখন দেখা যাক সমানে কী হয়। জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, এটি সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন। আর জনগণ ঠিক করবে কে সরকার গঠন করবে। জনগণের আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে জামায়াত নিয়ে। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ভোটের জন্য কবে প্রস্তুত হতে পারবে জামায়াত, এমন প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, এখন বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। আগে সরকারকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। যেনতেন নির্বাচন হওয়া যাবে না। আমাদের দলগত প্রস্তুতি আছে। জামায়াতের লক্ষ্য কি আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের বাক্সে নেওয়া? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছি না। সবার ভোটই জামায়াত প্রত্যাশা করে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাজনীতির মাঠে রয়েসয়ে এগোচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তাড়া থাকলেও জামায়াতের তেমন হেলদুল নেই। তারা জোর দিচ্ছেন রাষ্ট্র সংস্কারে। নেতারা বলছেন, তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন করলে আমূলে পরিবর্তন আসবে না। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার ব্যতিরেকে নির্বাচন করলে ফ্যাসিবাদী ভাবনা জিইয়ে থাকবে। তবে এই সংস্কারের ফাঁকে সারা দেশে জামায়াতের নেতাকর্মীরা চষে বেড়াচ্ছেন। মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সুবিধাজনক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে একক বা জোটের সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। এবার নির্বাচনে গিয়ে আগের সব রেকর্ড ভাঙতে চান তারা।
মাঠে বিএনপির সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ালেও জামায়াত দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে কোনো বিরোধে যাবেন না তারা। কৌশলে তাদের হাতে রেখে বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের বলয় তৈরি করতে চান। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচনে সবাই তো ভালো ফল করতে চায়। যে উপায়ে নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো ফল অর্জন করা যাবে, জামায়াত সেভাবেই এগোচ্ছে। আমরা এখনও ঠিক করিনি এককভাবে নির্বাচন করব নাকি জোটগতভাবে অংশ নেব। আগে জনমত তৈরির চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি আমাদের করণীয় ঠিক করে দেবে। আমরা বিএনপি কেন, কারও সঙ্গেই খারাপ সম্পর্ক চাই না। কেউ যদি আমাদের কথা না বুঝে অপবাদ দেয়, তা হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা চাচ্ছি প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন হোক।
জামায়াতের ঢাকা উত্তরের একজন নেতা জানান, দায়িত্বশীল নেতারা সারা দেশে চষে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছেন। জনসমর্থন বাড়াতে জনসম্পৃক্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াত নিয়ে ইতিমধ্যে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। জামায়াত এটি ধরে রাখতে চায়।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নেতা আশরাফুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা এতদিন সরকার ও প্রশাসনের বাধায় দলকে ফোকাস করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে দলের কার্যক্রম সবার সামনে তুলে ধরার। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের প্রস্তুতি সবসময় আছে। আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ১৫০ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও তৈরি করেছিলাম।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি সময়ের আলোকে জানান, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি দল। তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। জামায়াত মানুষের পালস (মনোভাব) বোঝার চেষ্টা করছে। জনগণ ৫ আগস্টের পর আমাদের ভালোভাবে নিচ্ছে।
সময়ের আলো/এএ/