প্রকাশ: রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৫৬ এএম (ভিজিট : ১৬৬)
ইসলামের দৃষ্টিতে পুরো পৃথিবীর মানুষ একটি পরিবারের মতো। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পুরো সৃষ্টিজগৎ আল্লাহর পরিবার। অতএব আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরণ করে’ (শুয়াবুল ঈমান : ৭০৪৮)। যেহেতু পুরো সৃষ্টিকুল একটি পরিবারের মতো, তাই সৃষ্টি জীবের সঙ্গে ব্যবহার হবে পরিবারের সদস্যদের মতো ও আত্মীয়স্বজনের মতো। আবার সব মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। কারণ সব মানুষের পিতা একজন, স্রষ্টাও একজন। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।’ (সুরা নিসা : ১)
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত হলো নামাজ। আর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে ধনী-গরিব, বাদশাহ-গোলাম, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাদা-কালোর মাঝে কোনো বৈষম্য থাকে না। সাম্য ও ঐক্যের ধারণাকে সামনে রেখেই সবাইকে কেবলামুখী হয়ে নামাজ ও কাবায় গিয়ে একই পোশাকে হজ আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সমাজে ধনী-গরিবের মাঝে সম্পদের বৈষম্য দূর করে একটি সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সাহায্য করে।
মুসলমানদের দুটি ঈদ-ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাও কিন্তু ধনী-গরিবের মাঝে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই আনন্দে আনন্দিত হওয়াতে সাহায্য করে। আর ঠিক একইভাবে ইসলাম বর্ণবৈষম্য রোধে গুরুত্বপূর্ণ মিকা পালন করে। কারণ ইসলামে বর্ণবৈষম্যের কোনো স্থান নেই। আসলে সব মানুষ এক পিতার সন্তান। তাই ভাইয়ে ভাইয়ে কোনো বৈষম্য থাকতে পারে না। আর এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকেই সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১)।
রাসুল (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বর্ণবৈষম্যের ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলেছেন। বিদায় হজের সময় আইয়ামে তাশরিকের মাঝামাঝি সময়ে নবী (সা.) বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে লোকজন! সাবধান! তোমাদের আল্লাহ একজন। কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের ও কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের, কোনো কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোনো শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। বলো, আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি? সবাই বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে যারা এখানে উপস্থিত আছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বাণী পৌঁছে দেয়’ (বায়হাকি)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের চেহারা-সুরত, ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের কর্ম ও অন্তরের অবস্থা দেখেন।’ (বুখারি : ৫১৪৪, ৬০৬৬)
একদিন এক সাহাবি অন্য এক সাহাবিকে তার মা কালো বর্ণের ছিলেন বলে তিরস্কার করেন। রাসুল (সা.) এতে ভীষণ রাগান্বিত হলেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি এমন মানুষ, যার মধ্যে জাহেলি বর্বরতা রয়েছে’ (বুখারি ও মুসলিম)। অতএব রাসুল (সা.)-এর ভাষ্যমতে, বর্ণবৈষম্য জাহেলিয়াত ও বর্বরতার অন্তর্ভুক্ত। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সমাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
সময়ের আলো/এএ/