ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খরগোশ ছানার লাভ ম্যারেজ
প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫৩ এএম  (ভিজিট : ১১২)
 
ঘন কুয়াশায় ঘেরা শীতের সকাল। নয়ন আজ মাঠে গেছে ও বাবার সঙ্গে ক্ষেতের শিম তুলতে। শিমের বান থেকে শিম তুলছে নয়ন। সে সময় হঠাৎ! ওর সামনে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল একটা খরগোশ। নয়ন খরগোশটাকে ধরার জন্য পেছনে ছুটল। কিন্তু চোখের পলকেই যেন মুহূর্তে হারিয়ে গেল খরগোশটি। খরগোশ খুঁজে না পেয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল নয়নের। সে এদিক-সেদিক খরগোশটির সন্ধান করতে লাগল। 
ঝোপঝাড়ের মধ্যে চোখ যেতেই সে ছোট্ট একটা খরগোশ ছানা দেখতে পেল। ছানাটি তার কুচিকুচি দাঁত দিয়ে বেশ আয়েশ করে চোয়াল নেড়ে-নেড়ে মুরুব্বিদের পান চিবানোর মতো কী যেন চিবিয়ে খাচ্ছে। আর বিড়বিড় করে তাকাচ্ছে নয়নের দিকে। খরগোশ ছানাটিকে দেখে নয়নের চোখে-মুখে যেন মুহূর্তে খুশির ঝলক ফুটে উঠল। সে দেরি না করে একটু আড়ালে গিয়ে। পা টিপে টিপে চুপিসারে গিয়ে ঝপাৎ করে খরগোশ ছানাটিকে ধরে ফেলল। আনন্দের যেন শেষ নেই নয়নের। সে উৎফুল্ল হয়ে হেসে ওঠে চিৎকার করে বলল ও আব্বা, আব্বা...
এই দেখো...একটা খরগোশ ছানা ধরেছি। নয়নের আব্বা, সজল বলল...তাই! যাক খুব ভালো হয়েছে। নয়ন বলল...আব্বা আমি আর শিম তুলব না, বাড়ি যাচ্ছি। তারপর নয়ন খরগোশ ছানাকে বুকের সঙ্গে জাপটে ধরে আনন্দে টগবগ করতে করতে মাঠ থেকে বাড়ির দিকে দৌড় দিল।
আর খুশিতে ছড়া কাটতে লাগল...
আহা! কী যে খুশি লাগছে
ধরে খরগোশ ছানা...
খরগোশ ছানার লম্বা দু-কান
চোখ যে টানা টানা।
কী যে সুন্দর পশম গায়ের
নরম যে তুলতুলে,
আদর করতে ইচ্ছা করবে
একবার দেহ ছুঁলে।
এই সংবাদ মুহূর্তে ওদের পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তেই। নয়নের মতো ছোট ওর বয়সি পড়শী যেসব ছেলেমেয়ে-যারা ওর খেলার সাথি। তারা সব খরগোশ ছানাটিকে দেখতে নয়নদের বাড়ি ভিড় জমাল। এদের মধ্যে আগে থেকেই নয়নদের বাড়ির পাশে কাজল নামের একটি মেয়ের পোষা খরগোশ ছানা ছিল। সেও এলো তার ছানাটিকে সঙ্গে নিয়ে। নয়নের খরগোশ ছানাটি ছিল মায়া।
ওদের মধ্যে কথা হচ্ছে কী নাম রাখা যায় নয়নের খরগোশ ছানাটির? শুনে নয়নের খেলার সাথিদের মধ্যে কেউ বলল বেলি রাখ নয়ন। তো আবার কেউ বলল ফুলি রাখ। কাজল মেয়েটি বলল যেহেতু আমার খরগোশ ছানাটি পুরুষ। আর তাই ওর নাম রেখেছি পুষি। নয়ন, তোর খরগোশ ছানা তো মায়া। তোর ছানার নাম থাক টুসি। নয়নের খুব পছন্দ হলো কাজলের দেওয়া নামটি। নয়ন বলল বাহ! মিল করে খুব সুন্দর নাম বলেছিস তো। যেহেতু আমি ওকে ফুলের জমির ঝোপ থেকে ধরেছি। তাই ওর নাম থাক ফুলটুসি। অবশ্য সংক্ষেপে টুসি বলেই ডাকব ভালো হবে না? সবাই বলল...হুম খুব ভালো হবে। 
তারপর থেকে খরগোশ ছানা টুসিকে ঘিরেই যেন নয়নের দুচোখে ঘুম নেই। নেই যেন ওর কোনো নাওয়া-খাওয়া। নয়ন কোথায় রাখবে টুসিকে? টুসিকে সে কী কী খেতে দেবে? এসব চিন্তায়। দুপুরে ওর আব্বা বাড়ি এলে একবার ওর মাকে তো একবার ওর আব্বাকে জিজ্ঞাসা করছে তার ছোট্ট টুসিকে সে কী খেতে দেবে? আর কোথায় রাখবে? নয়নের মা-বলল...একটা লোহার খাঁচা বানিয়ে সেই খাঁচায় রাখতে খরগোশ ছানাটিকে। নয়ন বলল...ঠিক আছে মা। রাতে শোয়ার সময় কিন্তু আমার সঙ্গে রাখব টুসিকে। কী খাওয়াবে সে টুসিকে?
এবার নয়নের বাবা বলল...খরগোশ ছানা কচি ঘাস, কলমিলতা শাক, গাজর, জল এসব খেতে পছন্দ করে। নয়ন বলল...ঠিক আছে আমি এখনই ওর জন্য মাঠ থেকে কচি জালি ঘাস কেটে আনছি। তারপর কাস্তে হাতে নয়ন মাঠে ছুটল ঘাস কাটতে। নয়ন তার শোয়ার ঘরে ছানাটিকে কাছে নিয়ে ঘুমায়। এভাবে বেশ কয়েকদিন যেতে না যেতে ছানাটি বেশ পোষ্য হয়ে উঠল নয়নের। এখন খরগোশ ছানাটিকে টুসি বলে ডাক দিলেই দৌড়ে চলে আসে নয়নের কাছে। ছানাটি সবসময় নয়নের কাছাকাছি থাকে। টুসির আদর-যত্নের কোনো কমতি নেই। মাসকয়েক যেতে না যেতেই ছানাটি বেশ ডাগর হয়ে উঠল। ওদিকে কাজলের পুরুষ ছানাটিও বড় হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছাড়া পেলেই কাজলের খরগোশ ছানা পুষি নয়নদের বাড়ি ছুটে চলে আসে টুসির সঙ্গে দেখা করতে। টুসিও সুযোগ পেলেই ছুট ধরে পুষিকে একনজর দেখতে। ওদের মধ্যে বেশ ভাব জমেছে, তা সবাই
বুঝতে পারে। এরই মধ্যে একদিন টুসি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ল। টুসিকে সুস্থ করার জন্য এলাকার পশু হসপিটাল থেকে চিকিৎসক আনা হলো। টুসির জন্য পুষির মন বেজায় খারাপ। কাজল খাদ্য দিলেও পুষি খাচ্ছে না। মন মরা হয়ে এদিক-ওদিক 
তাকাচ্ছে। মজে-মজে পুষি আর টুসির প্রেম বহু
দূর যে গড়িয়ে গেছে, তা কারোর আর বুঝতে বাকি থাকে না। যাহোক অনেক ওষুধ পথ্য যত্নের পর টুসি সুস্থ হয়ে উঠেছে। তা দেখে কাজলের পুষির সেই মন মরা ভাবও যেন কেটে গেছে । নয়ন কাজল বয়সে কিশোর-কিশোরী হলেও কমবেশি বুঝতে শিখেছে ওরা। যা বোঝার বুঝতে বাকি থাকে না ওদের। পাড়ার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এ নিয়ে কানাঘুষা চলতে থাকে। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিল পুষি আর টুসির মন দেওয়া-নেওয়ার ঘটনা অনেকদূর গড়িয়েছে। যেহেতু ওদের বিয়ের বয়স হয়েছে। আর তাই দেরি না করে ওদের লাভ ম্যারেজ পড়িয়ে দিয়ে দেবে। ওদের যে কথা সেই কাজ। কিন্তু খরগোশ ছানা পুষি আর টুসির বিয়ের বরযাত্রী হবে কারা? 
নয়ন আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলতে লাগল। আরে তুরা কোনো চিন্তা করিস না...
আজ যে আমার পোষা টুসির
হবে খুশির বিয়ে,
দাওয়াত দে সব পশুপাখির
কচ্ছপ ময়না টিয়ে।
সিংহ থাকবে থাকবে যে বাঘ
থাকবে শিয়াল মামা,
টুসির জন্য কিনে আন সব
শাড়ি গয়না জামা।
তারপর সুন্দর করে সবাই কাজলের পুষি আর নয়নের টুসিকে বিয়ের সাজে সাজাল। কাজিকে ডাকল একসময় বিয়ে পড়ানোর জন্য। নয়ন আর কাজলের পাড়ার খেলার সাথিরা। তারা সব যার যার নিজেদের বাড়ি থেকে চাল, ডাল, আলু, আর টাকা তুলে। তারপর  মাংস কিনে পুষি আর টুসির বিয়েতে ধুমধাম করে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করল। মালাবদল করিয়ে সবাই মিলে খুব আনন্দের সঙ্গে ইহহুল্লোড় করে পুষি আর টুসি খরগোশ ছানার বিয়ে দিল।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close