ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পার্বত্য মেলা
রাজধানীতে পাহাড়ি ঐতিহ্যের পসরা
প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৬ এএম  (ভিজিট : ২৩৬)
চরকা ঘুরিয়ে তুলা থেকে সুতা তৈরিতে ব্যস্ত মংকিউ চিং মারমা। তবে এর জন্য নেই কোনো আধুনিক মেশিনের ব্যবহার। হাতের সাহায্যে সরাসরি গাছ থেকে তুলা সংগ্রহ করে সুতা তৈরি করে দেখাচ্ছেন তিনি। এমনই একটি দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত পার্বত্য মেলায়।

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, এটি হলো আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে তুলা থেকে সুতা প্রস্তুতকরণ নিয়ম। এর ফলে খুব সহজে কাপড়ের সুতা তৈরি করা যায়। এ ছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি, কাপড়, খাবার ও ঐতিহ্য ছড়িয়ে আছে মেলাজুড়ে। আর প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে মিশে আছে পার্বত্য জেলাগুলোর সংস্কৃতি।

মেলাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে প্রতিটি স্টলে। কমপ্লেক্সটি যেন এক টুকরো পার্বত্য অঞ্চলে রূপ নিয়েছে। প্রত্যেকে নিজস্ব পোশাক পড়ে প্রদর্শনী করছেন বিভিন্ন পণ্য। আর এগুলো দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। এটি পার্বত্য মেলা হলেও সাধারণ মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ করা গেছে। মেলাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন আমেজ। চার দিনব্যাপী এই মেলায় রয়েছে ৮৩টি স্টল। এখানে পার্বত্য জেলার রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে বিভিন্ন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পণ্য, ফল ও শস্য এবং নানা খাবারের প্রদর্শনী হয়।

মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, নিজের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে সব স্টল। পাহাড়ি প্রকৃতি, আবহাওয়া, পাহাড়, পর্বত, নদী-ঝরনা, লতাপাতার গুল্ম, শাকসবজি, ফল-ফলাদি, সবুজ বৃক্ষের সজীবতা এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ ফুটে উঠেছে মেলায়। মেলার স্টলগুলোতে সাজানো রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি সংস্কৃতির বুনন শিল্পের ছোট-বড় সবার জন্য নানা বাহারি পোশাক। নকশি করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, নিজস্ব ডিজাইন করা পোশাক, টেক্সটাইল পণ্য ও হস্তশিল্প পণ্যগুলো সব ধরনের ক্রেতাদের আকর্ষিত করছে। ক্রেতারাও পছন্দমতো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করছেন। এ ছাড়া আম, কাঁঠাল, বরই, তেঁতুল, কদবেল, পেঁপে, কলা ও আনারসহ বিভিন্ন ধরনের ফল মেলার ভোজন রসিকদের রসনার আকর্ষণকে বাড়িয়ে তোলে। আগতদের জন্য আছে সুপেয় আখের রস।

পার্বত্য মেলায় খাবার মেন্যুতে দেখা যায়, জনপ্রিয় পাহাড়ি শাকসবজি, প্রাকৃতিক উপাদানের মসলা, মাছ, মাংস এবং কচি বাঁশের খাবার। সেদ্ধ কচি বাঁশ, বাঁশের ডাল, বাঁশ দিয়ে ছোট মাছ রান্না ও সবজির মিশ্রণে বাঁশ খাদ্য মেলায় রসনা বিলাসিতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। পাহাড়ি চিকেন মসলার সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে বাঁশের মধ্যে ভরে অল্প আঁচে রান্না করা মাংসে চুলোর ধোঁয়া এবং কাঠের গন্ধের মিশ্রণ মেলায় ক্রেতাদের বাম্বু চিকেনের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয়। বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়ো, বরবটি, আলু ইত্যাদি রান্না করা খাবার। পাজন রান্না পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর আরেকটি ঐতিহ্যবাহী নিরামিষ খাবার। ভাপ দিয়ে রান্না বা সেদ্ধ করা হেবাং খাবার মেলায় আগ্রহী ক্রেতাদের রসনার স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া শামুকের ঝোল খাবার তো আছেই। পার্বত্য মেলায় সবার জন্য আছে তুলশিমালা চালের চিকেন বিরিয়ানি। সেই সঙ্গে রয়েছে সান্নী পিঠা, কলা পিঠা, কালো বিন্নি চালের পিঠা, লাড্ডু, সিস্টেম, খাংময়, ব্যাম্পো সুট, ইজোর ইত্যাদি। সেদ্ধ শাক ভর্তায় খাবারে পরিপূর্ণতা আনতে বাধ্য।

স্লাচিং মারমা নামের একজন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয়েছি। এসব আমাদের উৎপাদন করা। অনেকেই আসছে মেলা দেখার জন্য। তবে আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম তেমনটি হয়নি। কারণ আশানুরূপ বেচাকেনা নেই। মানুষ এসে শুধু ঘুরে যাচ্ছে। তবে এর মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে পারছি, এটিই ভালো লাগছে। কারণ পাহাড়ি তরুণরা শুধু জুম চাষ আর পূজা-পার্বন উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়, সম্প্রীতির বন্ধনে পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য বর্ধন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। পাহাড়ি-বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ মেলা।

পরিবারের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে আসেন আবিদুল আরিফ। তার সঙ্গে কথা হলে সময়ের আলোকে জানান, মেলায় এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। কারণ এখানে পাহাড়ি এলাকার ঐতিহাসিক সবকিছু পাচ্ছি। তা ছাড়া মেলাকেও সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। পার্বত্য অঞ্চলের খাবার সবার কাছেই জনপ্রিয়। তা ছাড়া তাদের কাপড়গুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তাই আমি এসেছি কিছু কেনাকাটা এবং ঘুরে দেখার জন্য। যদিও তাদের পণ্যের দাম তুলনামূলক একটি বেশি।

দেশের মোট ভূখণ্ডের এক-দশমাংশ অঞ্চলজুড়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়েই এই মেলার আয়োজন। চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলাটি গত বুধবার শুরু হয়ে আজ শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। দর্শনার্থীদের আকর্ষিত করতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ছিল পার্বত্য তিন জেলার ঐতিহ্যবাহী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।







https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close