ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ওয়াশিংটনে বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স মিলেছে
প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:৪২ এএম  (ভিজিট : ১৭৬)
এলিজাবেথ অ্যান কিজ। খুবই হাসিখুশি ছিলেন, মজা করতে ভালোবাসতেন। ৩৩ বছরের কিজ পেশায় ছিলেন আইনজীবী। কাজ করতেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। কানসাসে গিয়েছিলেন একটি কাজে। সেখান থেকে বুধবার ফিরছিলেন তিনি। কারণ, সেদিনই ছিল তার জন্মদিন। কিন্তু দিনটি আর পালন করা হলো না। তার আগেই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তার।

গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে ধাক্কায় পটোম্যাক নদীতে ভেঙে পড়ে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। সেই উড়োজাহাজের ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ছিলেন এলিজাবেথ কিজ। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে আছে তার দেহও।

যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীর ওপর সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো যাত্রীবাহী বিমানের ব্ল্যাক বক্সগুলোর খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কীভাবে দুর্ঘটনা হলো, কার দোষ ছিল, তা নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। কিন্তু দুর্ঘটনায় সন্তানকে হারিয়ে এখন আঁধার নেমে এসেছে কিজের পরিবারে। তার প্রেমিক ডেভিড সিডমান বিবিসিকে বলেছেন, জন্মদিনেই কিজের মৃত্যু হয়েছে। ৩৩তম জন্মদিন ছিল এলিজাবেথ কিজের। এই দিনটিতে কী কী করবেন তা কিজ পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন আগেই। বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে কোথায় কোথায় যাবেন সবই ঠিক করা ছিল। বাড়িতে ফোন করেও জানিয়েছিলেন, উড়োজাহাজে করে ফিরছেন তিনি। কিন্তু ফেরা যে আর হবে না কে জানত!

যাত্রীবাহী বিমানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারের এ সংঘর্ষে দুই আকাশ যানের ৬৭ আরোহীর সবাই মারা গেছেন। রোনাল্ড রেগান বিমানবন্দরের কাছে বুধবার রাতের এই দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে। রাজধানীর বুকে দেশটির অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর থাকায় ওয়াশিংটনের আকাশপথে চলাচল বেশ সুচারূভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে কেমন করে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে দুজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ। এই দুর্ঘটনার কারণ কী কী হতে পারে, তা নিয়ে কথা বলেছেন তারা; যা এই দুর্ঘটনার তদন্তকারীদেরও দিশা দেখাতে পারে।

যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বের বুকেই সবচেয়ে সুরক্ষিত আকাশপথ, বলছেন সামরিক বিশেষজ্ঞ শন বেল। তার মানে, বিমান কিংবা হেলিকপ্টার উভয় চালককেই নিয়মনীতি খুব কঠোরভাবে পালন করতে হচ্ছিল।

দেখা গেছে বিমানটি রানওয়েতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সাধারণত এই সময় উড়োজাহাজের গতিপথ চক্রাকার হয়ে যায়। একটি পাক খেয়ে রানওয়েতে নামে বিমান। সামরিক আকাশ যানের পাইলটরা সাধারণত এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকেন না, বলছেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাইক কোফিল্ড। তার মানে বিমানটির গতিপথ বুঝতে ভুল হতে পারে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারটির চালকের। ক্যাপ্টেন কোফিল্ড বলেন, এটি সামরিক ওই হেলিকপ্টারের চালকের মাথায় নাও আসতে পারে যে রানওয়েতে নামার আগে বিমান একবার চক্রাকারে ঘুরতে পারে।

হেলিকপ্টারটির এত বেশি উচ্চতায় ওঠা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন, যা তুলেছেন সামরিক বিশেষজ্ঞ শন বেল। তিনি বলেন, তদন্তকারীদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে, হেলিকপ্টারটি কেন ২০০ ফুটের বদলে ৪০০ ফুট উচ্চতায় গেল, এর মানে কী?

কোনোরকম আগাম অনুমান করতে চাননি তিনি; তারপরও বলেন, এর মানে হতে পারে, এমন কিছু ঘটেছিল, যে কারণে তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচুতে উঠতে হয়েছে। সাধারণত জরুরি কোনো ব্যাপার থাকলেই তাকে এতটা ওপরে উঠতে বলা হতে পারে। এই মুহূর্তে বলা যাবে না যে কার ভুল ছিল, তবে তদন্তকারীদের বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া দরকার।

সামরিক বাহিনীর ওই ব্ল্যাক হক হেলিপ্টারের চালক নাইট ভিশন চশমা পরা ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নিশ্চিত করেছেন। এই ধরনের চশমা দিয়ে রাতের অন্ধকারেও সব বস্তু দেখা যায়। তা হলে যাত্রীবাহী বিমানটি তার নজরে এলো না কেন? সামরিক বিশেষজ্ঞ শন বেল বলছেন, প্রত্যন্ত এলাকায় এই চশমা ভালো কাজে লাগতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটনের মতো আলোকিত শহরের ক্ষেত্রে সেভাবে কাজের নয়। কারণ এখানে একটি বিমানে থেকে আপনার আরেকটি বিমানকে বোঝা বেশ কষ্টকর। কেননা চারদিকে এত আলো যে আপনি অন্য বিমানের আলোকে আলাদা করতে পারবেন না। এমন একটা পরিস্থিতিতে আপনি নিজের চোখকেও বিাস করতে চাইবেন না।

কোফিল্ড বলেন, হেলিকপ্টারটি ব্যবহার করছিল আল্টা হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ইউএইচএফ), যা সাধারণত সামরিক যান ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে যাত্রীবাহী বিমানটি ব্যবহার করছিল ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএইচএফ)। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে দুই পাইলটের সঙ্গে একই সময়ে যোগাযোগ হয়েছিল। এমনটা হতে পারে যে ভিন্ন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করায় বিমানের পাইলটের ইঙ্গিত হেলিকপ্টারের চালক ধরতে পারেননি, আবার হেলিকপ্টারের ইঙ্গিত বিমান ধরতে পারেনি।

আকাশে চলাচল নিরাপদ করতে বিমান থাকে ট্রাফিক এলারর্ট অ্যান্ড কোলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেমের আওতায়। কিন্তু সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারটিতে এই সতর্কতা ব্যবস্থা যুক্ত ছিল না বলে ধারণা করছেন ক্যাপ্টেন কোফিল্ড। তিনি বলেন, সামরিক আকাশ যানগুলো যেহেতু তাদের নির্দিষ্ট ধরনে চলে, তাই তারা সবসময় এগুলো মেনে চলে না।

বিমান ও হেলিকপ্টার দুটোই এমন একটি আকাশে উড়ছিল, তা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম আকাশপথের একটি। আর সেটিও সতর্ক ব্যবস্থায় বিভ্রান্তি তৈরি করে বলে মনে করেন শন বেল। তিনি বলেন, চিন্তা করুন, কত ব্যস্ত এই বিমানবন্দর, সারাক্ষণ বিপ বিপ (সতর্কতা সংকেত) করবে। একজন মিলিটারি পাইলট তো এই ধরনের পথে চলতে অভ্যস্ত নয়। এটি তার কাছে খুব একটা পরিচিতও নয়।
তদন্তকারীদের গুরুত্বের জায়গা এখন বিমান ও হেলিকপ্টারের ব্ল্যাক বক্স। উড়োজাহাজের ফ্লাইট রেকর্ডার সাধারণভাবে ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত; এটি একটি ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং ডিভাইস। এ দুটি অংশের একটিতে ককপিটের সব ধরনের শব্দ রেকর্ড হয়, অন্য অংশে রেকর্ড হয় ফ্লাইটের সব তথ্য। নদীতে তল্লাশি চালিয়ে বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেইফটি বোর্ড (এনটিএসবি)। ফলে দুর্ঘটনাটি কী করে ঘটল, তার একটি হদিস মিলতে পারে।

ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে দুই পাইলটের রেডিও যোগাযোগে কী কী তথ্য বিনিময় হয়েছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্যাপ্টেন কোফিল্ড বলেন, নদীতলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ কীভাবে পড়ে আছে, তার ছবিও দেখতে পারেন তদন্তকারীরা। তাতে বিমানটির গতি ও কোন কোনে উড়ছিল, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

শন বেল বলেন, পাইলটরা কী করেছিল, তাও খতিয়ে দেখতে পারেন তদন্তকারীরা। তারা খেয়েছিলেন কি না, তারা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন কি না, তারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছিলেন কি না এগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। সবকিছু যদি ঠিকঠাক মতো হয়, তবে বেরিয়ে আসতে পারে, আসলে কী ঘটেছিল? তা জানতে পারলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানোর পদক্ষেপও নেওয়া যাবে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close