প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:১২ এএম (ভিজিট : ১০৬)
মানবজীবনের এক অগ্রহণযোগ্য অবস্থার নাম দারিদ্র্য। দারিদ্র্য একটি অভিশাপ। যে অভিশাপ এর কবলে পড়লে কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেও দারিদ্র্য চরমভাবে বিরাজ করে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয় কম। স্বাধীনতার এত বছরেও ‘দারিদ্র্য’ শব্দটাকে আমরা মুছে ফেলতে পারিনি।
কোনো না কোনো যুক্তিসংগত পদক্ষেপের অভাবে দারিদ্র্যকে আমরা নির্মূল করতে পারছি না। তবে দারিদ্র্যের হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সেটা দেশের সার্বিক বিবেচনায় কতটা অনুকূলে হবে তা সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায় না। আমাদের নতুন নতুন প্রত্যাশাগুলোর অন্যতম স্থানে আছে দারিদ্র্যশূন্য দেশের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রত্যাশা যা-ই হোক না কেন, সেটা প্রাপ্তিতে রূপান্তর করতে যথাযথ পরিকল্পনা প্রয়োজন।
বিগত সরকারের নেয়া প্রতিটি প্রকল্পে দারিদ্র বিমোচনের বিষয়টি অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দারিদ্র বিমোচনের নামে শুধুমাত্র অর্থ হরিলুট হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার মাদারীপুর জেলায়। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাদারীপুরে দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মানে, এ জেলার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫৪ জনের বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জেলার ডাসার উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা দেশে সবচেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের দারিদ্র্যের মানচিত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেখানে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও থানার দারিদ্র্য পরিস্থিতির তথ্য আছে। বিবিএসের তথ্য অনুসারে, দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার নোয়াখালী জেলায়, ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এর মানে নোয়াখালী জেলার ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের মতো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। উপজেলা ও থানা বিবেচনায় রাজধানীর পল্টন থানা এলাকায় ৯৯ শতাংশ মানুষ গরিব নন। এখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ১ শতাংশ।
সামাজিক সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আরও কমে আসবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সঠিক ব্যবহারে দেশে দারিদ্র্যের হার অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আমাদের দেশের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত গ্রামাঞ্চলকেন্দ্রিক। কিন্তু প্রচুর কর্মহীন মানুষ জীবনের তাগিদে এখন গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দারিদ্র্য এখন শহরাঞ্চল-গ্রামাঞ্চল দুই জায়গাতেই জেঁকে বসে আছে।
আমরা মনে করি, দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকার মধ্যে ভৌগোলিক বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রান্তিক মানুষ বেশি দারিদ্র্যের জালে জড়িয়ে পড়ে এ জন্য সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আয়বৈষম্য একটা বড় সমস্যা। এই বৈষম্য মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্যশূন্য দেশের প্রত্যাশা প্রাপ্তিতে পরিণত হবে।