পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে পরিচিত ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের শত কোটির টাকার বাড়ির তথ্য ফাঁস হয়েছে। যার তথ্য তিনি নির্বাচনী হলফ নামায় উল্লেখ করেননি। তার সমর্থকদের দাবি নাসিম নাকি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। অথচ এই নাসিম দুর্নীতির বরপুত্র। তিনি শেখ হাসিনা ও রেহানার ফান্ড কালেকটর।
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ফাপরবাজি ছিলো যার একমাত্র পেশা। এক সময় ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল। আর এই অফিসার পদটাই তার জীবনে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদপদবি না থাকার পরও নাসিমের হাতে টাকা আসতে থাকে স্রোতের মতো। প্রশাসনের বদলি, পদায়ন থেকে শুরু বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানীর লাইসেন্স করে দেওয়া কাজ করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
অনুসন্ধান করে যা জানা গেছে, ২০২৪ এর নির্বাচনী হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষি জমি ১০ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা, তার স্ত্রীর ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৬ টাকা, অকৃষি জমি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
তার রয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের তিনটি দালান (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) রয়েছে। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের ৬টি ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০১ টাকা মূল্যের ৪টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট।
এই নাসিম সাহেব বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসে ১৯৮৬ সালে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার এপিএস হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। এই দায়িত্বে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে উপসচিব হিসেবে তিনি প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদত্যাগ করে অবসরে যান। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।১৯৮৬-২০০৯ পর্যন্ত উপসচিব মর্যাদার এই কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তার ও স্ত্রীর মোট ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। প্রশ্ন উঠেছে এই সময়ে অন্য যে সকল উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন তারাও কি এমন শত-কোটিপতি হতে পেরেছেন?
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে এই নাসিম, রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকায় এনই(কে) ব্লকের ৮৩ নং সড়কের ১৩/বি প্লটটি জমি ও ভবন সহ কিনে নেন। জমির পরিমাণ ১২ কাঠা। যদি কেবল জমির সর্বনিম্ন মূল্যও ধরি কাঠা প্রতি ১০ কোটি টাকা, তাহলে হাসিনার এই সাবেক এপিএস গুলশানে ১২ কাঠা জমি ক্রয় করেন ১২০ কোটি টাকায়। যদিও তার হলফ নামায় এই জমির বিস্তারিত উল্লেখ নেই। তা এই ১২০ কোটি টাকাই বা কোথায় পেলেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম?
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে সার্বিকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
সময়ের আলো/জেডআই