ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মাওলানা সাদ অনুসারীদের প্রতি মুফতি আমানুল হকের আহ্বান
আমিরের প্রতি ভালোবাসা থাকুক, কিন্তু দ্বীনের বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মে চলে আসুন
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:৪৯ এএম  (ভিজিট : ১৩৮)
নানা শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে শুরু হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। কতটুকু প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতে পেরেছেন?
মুফতি আমানুল হক : বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির জন্য সাধারণত তিন/চার মাস সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এবার আমরা সময় পেয়েছি খুব কম। পূর্ণ এক মাসও পাইনি। তবু আলহামদুলিল্লাহ অল্প সময়ে অনেকটাই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত জায়গায়-আরব তাঁবু, উর্দু তাঁবু, ইংলিশ তাঁবু, মেহমানদের খাবারের ব্যবস্থা, ওজু-ইস্তেঞ্জার স্টেজ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দেশি সাথিদের বলা হয়েছে যার যার খিত্তা-খুঁটির জন্য শামিয়ানা ও সামানা নিয়ে আসতে। বুধবার থেকেই লোকজন আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ বিশ্ব ইজতেমা মাঠ।

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব বেশ বিতর্ক তৈরি করেছে। সম্প্রতি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব কারণে বিদেশি মেহমানদের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ছে কি?
মুফতি আমানুল হক : ইজতেমার মাঠে একতরফাভাবে আমাদের সাথিরা যেভাবে হামলার শিকার হলো তা খুবই অপ্রত্যাশিত এবং অপ্রীতিকর। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষ সেটা দেখেছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। বিশেষ করে বহির্বিশ্বের মানুষরা সাধারণত শান্তিপ্রিয়; এ ধরনের রক্তপাত দেখে তারা অভ্যস্ত নন, তো ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এরপরেও আলহামদুলিল্লাহ ধারণার চেয়েও বেশি মেহমানের আগমন হচ্ছে এবার। এই মুহূর্তে আমি বিদেশি তাঁবুতে বসা আছি, আমার সামনেই মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কিরগিস্তান ইত্যাদি দেশের শত শত মেহমানের চলাফেরা দেখতে পাচ্ছি। এবার ৬০-৭০টি দেশের মেহমানরা ইজতেমায় অংশ নেবেন।

এবার ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা কাজ করছে কি?
মুফতি আমানুল হক : আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস রাখি, ভরসা রাখি, দোয়া করি। মুরুব্বিদের পক্ষ থেকে জিকিরের জামাতও রাখা হয়েছে। পাহারার দায়িত্বশীলরাও কাজ করছে। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও চৌকান্না আছে। তবু একটু শঙ্কা তো আছেই, একশ্রেণির ভাই যারা আমাদের বাঁকা দৃষ্টিতে দেখছেন, আমাদের ভাগে দুই পর্বে ইজতেমা দেওয়া হয়েছে, এটা তাদের অন্তর্জ্বালার কারণ হয়েছে। তারা এটাকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করবে। যেমন আজকে (বুধবার) এক জেলা থেকে ইজতেমার উদ্দেশে একটি বাস রওনা হয়েছে, তো এক ব্যক্তি উঠে বলছে যে, ময়দানে তো শুনলাম ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। এটা সাথিদের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর এক প্রকার অপ্রচেষ্টা। এমন তো নিশ্চয় আরও অনেক জায়গায় হয়েছে। তারা পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশে এখানে প্রবেশ করতে পারে! তবে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি, তিনি নিশ্চয় সবকিছু নিরাপদে রাখবেন।

মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীদের অনেকে অভিযোগ করেন আলেমরা তাবলিগে এসে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন কিংবা তাবলিগকে বিতর্কিত করতে রাজনৈতিক আলেমরা দায়ী-আপনারা বিষয়টা কীভাবে দেখেন?
মুফতি আমানুল হক : এটা তাদের একটা ‘তকমা’ দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। একজন আলেমের একাধিক পরিচয় থাকতে পারে। তবে একজন আলেমের বড় পরিচয় তিনি ‘আলেম এবং দ্বীনের তত্ত্বাবধায়ক’। এ ছাড়া তিনি হতে পারেন কোনো মসজিদের ইমাম, কোনো মাদরাসার শিক্ষক, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা। আমাদের এখানেও (তাবলিগে) যেসব আলেমরা এসেছেন; খেলাফত মজলিস হোক, জমিয়ত হোক, চরমোনাই হোক, যে যেখান থেকেই আসুক, সেটা তার ব্যক্তিগত একটি পরিচয়। আমাদের এখানে তারা যখন এসেছেন, তখন কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে না বরং দ্বীনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে এসেছেন। অপর পক্ষ থেকে বা তাদের আমিরের পক্ষ থেকে যেসব ভুল কথাবার্তা, কুরআন-সুন্নাহবিরোধী বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে, তখন তারা আলেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য এসেছেন। তারা যদি এটা না করতেন তা হলে কেয়ামতের ময়দানে তারা জিজ্ঞাসিত হবেন-তোমাদের সামনে হক-বাতিলের দ্বন্দ্বের সময় তোমরা হক প্রতিষ্ঠার মেহনত করোনি কেন। আসলে তাবলিগের কাজ আগেও এবং বর্তমানেও কোনো রাজনৈতিক প্রভাবে চলছে না। বরং এখানকার সব আমল, কার্যক্রম তাবলিগ জামাতের শূরার ফায়সালদের মাধ্যমেই হচ্ছে। মাওলানা জুবায়ের সাহেব, রবিউল হক সাহেব, ওমর ফারুক সাহেব, তারাই ফায়সালা দিচ্ছেন। বাইরে থেকে আলেমরা এসে পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু ফায়সালা হচ্ছে এখান থেকেই। কাকরাইলেও, ইজতেমায়ও।

মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীদের ব্যাপারে আপনাদের কী বার্তা...
মুফতি আমানুল হক : আমি দুটো কথা বলতে চাই, প্রথমত দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনত হচ্ছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার একটা মাধ্যম বা উপলক্ষ। তাবলিগ কোনো লক্ষ্যবস্তু না, লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে দ্বীন। দ্বীনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এবং তাবলিগকে উপলক্ষ বানিয়ে মেহনত করলে হকের পথে থাকা যাবে। আলেমরা এ কথা বলছেন, বলবেন, বোঝাবেন। আলেমরা হচ্ছেন দ্বীনের জিম্মাদার ও তত্ত্বাবধায়ক, আমরা তাদের নির্দেশনা মেনে চলব। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, দ্বীন যদি লক্ষবস্তু হয়ে থাকে, তা হলে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন না। দ্বীন কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে, কিন্তু ব্যক্তি কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে না। তাবলিগ জামাতের কাজ শুরু করেছেন মাওলানা ইলিয়াস সাহেব, তিনি চলে গেছেন; দ্বিতীয় হজরতজি মাওলানা ইউসুফ সাহেব চলে গেছেন; তৃতীয় হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব চলে গেছেন; এখন আমাদের অপর পক্ষের ভাইয়ে যাকে কেন্দ্র করে চলছে তিনিও চলে যাবেন; কিন্তু দ্বীন থেকে যাবে, আর দ্বীনের তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছেন উলামায়ে কেরাম। আমরা অপর পক্ষের ভাইদের মেহনত ছেড়ে দিতে বলব না, তারা যাকে কেন্দ্র করে চলছেন তার ভালোবাসাও ছাড়তে বলব না, কিন্তু দ্বীনকে লক্ষ্য বানিয়ে দ্বীনের তত্ত্বাবধায়ক আলেমদের মেনে তাবলিগের মেহনত করতে বলব। তাদের আমিরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা বহাল থাকুক, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দ্বীনের বৃহত্তর একক প্ল্যাটফর্মে চলে আসুক।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close