সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কিংবদন্তি পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠা করেন কথাশিল্পী অঞ্জন হাসান পবন। গত পাঁচ বছরে কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস এবং গল্পগ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পর্যন্ত তাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটির এগিয়ে চলা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
বইমেলা উপলক্ষে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যস্ততা কেমন?
মারাত্মক রকমের ব্যস্ততা এবং প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছি। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিতব্য বইগুলোর কোনোটা এখন চূড়ান্ত, কোনোটা প্রেসে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সব বইয়ের প্রোডাকশন বইমেলার আগেই শেষ করার। তাই খুব প্রেসারে আছি বলা যেতে পারে।
পাণ্ডুলিপি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের পদ্ধতি কেমন?
আমরা সবসময় চেষ্টা করছি মানসম্মত পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে। যার ফলে আমাদের বইগুলো থাকে নির্ধারিত। কিংবদন্তি পাবলিকেশন খুব গুনে বেছে কাজ করে। যেহেতু আমাদের বইমেলায় বই প্রকাশের সংখ্যা খুবই কম, সেহেতু আমরা পাণ্ডুলিপির মানোন্নয়নের সময় পাই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি পাঠকদের নির্ভুল বই উপহার দিতে। তা-ও ক্ষেত্রবিশেষ অসাবধানতাবশত দুয়েকটা ভুল থাকা অসম্ভব নয়।
অভিযোগ আছে, আপনার প্রকাশনীর বইয়ের মূল্য বেশি; এ বিষয়ে কী বলবেন?
অভিযোগটা আমিও শুনি হুটহাট। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা আছে। জিনিস যেটি ভালো, দাম তার একটু বেশি হবে-সেটিই স্বাভাবিক। আমরা বর্তমান বাজারে সব বই একই মান বজায় রেখে দেশের সবচেয়ে উন্নত কোয়ালিটির প্রোডাকশন নিশ্চিত করছি। এতটা উন্নত কোয়ালিটি নিশ্চিত করার ফলে বইপ্রতি প্রোডাকশন কস্ট অনেক বেশি হয়। যার ফলে কিছু পাঠকের কাছে আমাদের বইয়ের দাম বেশি মনে হওয়াটা অযৌক্তিক নয়। বর্তমান বাজারে বই তৈরির সব উপাদানের দাম বাড়তি। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি-বইয়ের দাম কীভাবে আরও কম রাখা যায় সে বিষয়ে।
মানোত্তীর্ণ বই বলতে আপনি কী বোঝেন? কেমন বই প্রকাশ করা উচিত?
মানোত্তীর্ণ বই বলতে এমন বইকে বোঝানো হয়, যা গুণগত মানে উৎকৃষ্ট। একটা বইয়ে বেশ কয়েকটি গুণগত মান ঠিকঠাক থাকলে আমরা তাকে মানোত্তীর্ণ বইয়ের তালিকায় রাখতে পারি। যেমন ধরুন, কনটেন্ট ভালো কিন্তু প্রোডাকশন খুব দুর্বল, আবার প্রোডাকশন খুবই ভালো কিন্তু কনটেন্ট দুর্বল-এ ধরনের বই আমার চোখে মানোত্তীর্ণ বই নয়। একটা বই মানোত্তীর্ণ হতে হলে সবদিক থেকেই উত্তীর্ণ হতে হবে বলে আমি মনে করি।
প্রকাশনা জগতের সমস্যা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
সমস্যা সবখানেই আছে আবার সমাধানও আছে। বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা এখনও প্রকাশনা জগতের সমস্যা সমাধানে একে অন্যের প্রতি আন্তরিক নই। সবচেয়ে বড় সমস্যা-একটি অসৎ শ্রেণি অনেক দিন ধরে প্রকাশনা সেক্টরে অসৎ উপায় অবলম্বন করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করছে। ফলে আরেকজন সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগে আমাদের ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। একে অন্যের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? পাঠকের জন্য কী ভাবছেন?
এটি আমার জন্য খুব কঠিন প্রশ্ন। আমার মতে, প্রতিটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের একটা রোডম্যাপ থাকা উচিত। এতে কর্মপরিধি সম্পর্কে অবগত থাকা যায়। আমরা আমাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী চেষ্টা করছি পাঠকদের আগামীতে মানসম্মত বই উপহার দেওয়ার এবং নিজেদের আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।