ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কৃষিবান্ধব শিল্পায়নে জোর দিতে হবে
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৮ এএম আপডেট: ৩১.০১.২০২৫ ২:১০ এএম  (ভিজিট : ১৪৭)
বর্তমানে আমরা সবাই অস্থির। কারও কথা কেউ শুনতে চাই না। আর আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক যে, শুধু নিজেকে ব্যস্ত। কোন সময় কোন বিষয় বিতর্কিত হয়ে উঠলে সেটি সমাধানে একটাই কথা ‘সবই মানি, তবে তাল গাছটি আমার’। আর এতে শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। 

এদিকে কেউ কোনো ভালো উদ্যোগ নিলে তার পদে পদে বাধা। শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা বিশ্বও একই নেতিবাচক ধারায় চলছে। ইউক্রেন, ফিলিস্তিন ও মিয়ানমারে কী হচ্ছে, তা হয়তো বুঝিয়ে বলতে হবে না। মূলত জীবনকে সমুন্নত রাখতে মানুষের প্রাপ্য অধিকারের আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এবং যুগপৎ স্থুল ও সূক্ষ্মতার আড়ালে অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত দিগন্ত, যাতে এমন কিছু ইতিবাচক নেই, যা অন্তর্ভুক্ত হয় না; যেমন-কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, খেলাধুলা, ধর্ম ইত্যাদি। তা ছাড়া সুক্ষ্মতায় বলতে গেলে সীমাহীন। এদিকে কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নতি হলেও অনেক ক্ষেত্রে উপযোগী শিল্পের ছন্দপতনে পরিবেশকে নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করা হয়। তবে কৃষির বর্তমান অবস্থায় উন্নীত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপট ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। কেননা একাত্তরে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর সাড়ে ৭ কোটি লোকের মৌলিক চাহিদা তথা খাওয়া-পড়ার জন্য হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি লোক হলেও তেমন অভাব নেই। কৃষি খাতের ধারাবাহিকতায় নিত্যনতুন নিয়ামক বেশ জোরেশোরে কৃষির প্রধান স্রোতের সঙ্গে যোগ হতে গিয়ে শিল্পের প্রতিফলে হোঁচটও কম খাচ্ছে না।

বস্তুত মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির আচার-আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত এবং এটি মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচ্য। এ ক্ষেত্রে এই ধারায় প্রাপ্য মতে জন্মগতভাবে মানুষ হিসেবে অধিকার ভোগ করবে। আর এটিই তো বড় অধিকার। কথাটি যদি ঘুরিয়ে বলি তা হলে এই দাঁড়ায় যে, দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে মানুষের যেসব অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত, তাদেরকে তারযথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য অন্যের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। 

এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ঘোষণায় প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘জন্মগতভাবে সব মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।’ মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের পথ ধরে প্রাচীন ভারতীয় নীতি শাস্ত্রসমূহ এক গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচ্য। এদিকে ৫৩৯ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস ব্যাবিলন আক্রমণের পর তিনি ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা নির্যাতিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন এবং তাদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনেরও সুযোগ করে দেন। যত কথাই বলি না কেন, মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ৬২২ সলে মহানবী (স.) কর্তৃক মদিনা সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এটি পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। আর এ সনদে মোট ৪৭টি অনুচ্ছেদে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে সন্নিবেশন করা হয়েছে। এটি মহাসনদ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত।

মানবাধিকার কথাটি ব্যাপক বা সামষ্টিক। যেহেতু প্রতিপাদ্য বিষয় ব্যাষ্টিক হিসেবে কৃষিবান্ধব শিল্পায়ন। তাই কেবল সেদিকে নজর দিচ্ছি। মানবতার আড়ালে বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো খাদ্যদ্রব্য। আর খাদ্যদ্রব্যের যোগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে কৃষিবান্ধব শিল্পায়নের বিকল্প নেই। আমরা তো ইতিমধ্যে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। কেননা আগে যেখানে এক একরে ১০-১৫ মণ শস্য হতো এখন সেখানে ৪০-৫০ মণ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের টেক অব স্টেজে আছে। সেহেতু এ স্টেজে শিল্পায়নের মাধ্যমে সুফল বিভিন্ন আঙ্গিকে আর দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জাপানসহ পাশ্চাত্য বিশ্বের উদাহরণ টেনে আনা হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া,সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবেশ, মৃত্তিকা তাপ, পানি ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে এগোনো শ্রেয়।

দেশ স্বাধীনের অব্যবহিত পরে এ দেশে আবাদযোগ্য জমি ছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ হেক্টর এবং মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ৯৫ লাখ টন। বর্তমানে সেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লাখ হেক্টর। অথচ দেশে বর্তমানে বছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় গড়ে প্রায় ৪১০ লাখ টন। ১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি। আর বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ কোটিতে। আবার প্রতি বছর দেশে যোগ হচ্ছে ২৪ লাখ নতুন মুখ। অন্যদিকে প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এক হিসাব মতে জানা যায় যে কলকারখানা, নগরায়ণ, আবাসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও নদীভাঙনের ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে ৬৮ হাজার ৭০০ হেক্টর করে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। 

তা ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণেও প্রতিদিন ২০ শতাংশ করে ফসলি জমি কমছে। মোট কথা-বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও আমাদের কৃষি কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েনি। মাথা উঁচু করে আছে। অবশ্য এর পেছনে কারণ হলো কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। আর এ ক্ষেত্রে ট্রাক্টর, হারভেস্টার, স্প্রেয়ার, প্ল্যান্টার, থেসার, বোলার, রিপার, ফর্কলিফট, ব্যাচ ড্রয়ার, মাড়াইকল, হাইড্রোটিলার মেশিন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এতদ্ব্যতীত সার হিসেবে ইউরিয়া, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, যৌগিক সার, সবুজ সার ইত্যাদি এবং যুগপৎ সেচের জন্য পাম্পস, গবেষণালব্ধ বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি অপরিহার্য উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিশ্বজনীনভাবে যদি চিন্তা করি, তা হলে প্রতীয়মান হয় যে শিল্প বিপ্লবের পথ ধরেই কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে উন্নতির থেকে উন্নত পর্যায়ে যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেকৃষি খাতে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। আর বীজ ও চারার ক্লোনিং তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশ সে পর্যায়ে এখনও আসেনি।

এদিকে কৃষিবান্ধব শিল্পায়নকে ঘিরে আমাদের দেশের শিল্পের দিকে যদি তাকাই, তা হলে লক্ষ্য করি যে এখানে ভারী, বড়, মাঝারি, ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প বিদ্যমান। আর দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য যেসব ইকুইপমেন্ট ও মেশিনারি দরকার, তা দেশে অনেকাংশে উৎপাদিত হলেও কিছু মেশিনারি এখনও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের মেশিনারি ও ইকুইপমেন্টস দেশেই যাতে উৎপাদিত হয় সেদিকে আরও সচেষ্ট হওয়া। কেননা প্রয়োজন হলেই যেন কৃষকরা হাতের নাগালের কাছে পায়, তা ছাড়া আরেকটি বিষয় খেয়াল করা সমীচীন যে শিল্প বর্জ্য যেন আবাদি জমি নষ্ট না করে। 

কৃষির মেরুদণ্ড শক্ত করতে উৎপাদিত পণ্য মার্কেটিংয়ের জন্য দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামোসহ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাতে রফতানি করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অর্থনীতিতে একটি কথা আছে, এমন কিছু মূলধনীয় মেশিনারি ও ইকুইপমেন্টস তৈরি করা বিধেয়, যার ফলশ্রুতিতে নতুনভাবে উৎপাদন করা যায়। আর এ বিষয়টি কৃষির অধিকাংশ শিল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

কৃষিবান্ধব শিল্পায়ন হলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। আর উত্তরোত্তর উৎপাদনের সুবাদে প্রকারান্তরে মানবাধিকারের পথে সহজ ও প্রশস্ত করবে।

সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close