প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৩ এএম (ভিজিট : ৯৪)
দেশের প্রথম পাতাল রেল বা মেট্রোরেল প্রকল্প-১-এর নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিতাপের বিষয়, প্রকল্পটি এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে। বাংলাদেশের নিকটবর্তী দেশ ভারত ১৯৮৪ সালে কলকাতায় পাতাল মেট্রোরেল তৈরি করেছে। কাজ শুরুর সময় বহুমুখী জটিলতায় একপর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাও করেছিল। পরে অনেক জটিলতা ও দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে কাজ শেষ করে। ভূ-গর্ভস্থ টানেল নির্মাণকাজ চলার সময় সড়ক দেবে যাওয়া ও আশপাশের ভবন হেলে পড়ার মতো ঝুঁকিও রয়েছে।
তখন পুরো করিডোরের চলাচল বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। কাজেই এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া উচিত হবে কি না, এখনই তার পুনর্মূল্যায়ন দরকার। নয়তো আরও বিলম্ব হলে সময় ও ব্যয় বহুলাংশে বাড়বে। তখন ভয়াবহ রূপ নেবে মানুষের দুর্ভোগ। আমাদের দেশে পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণ করিডোরে শঙ্কা মোকাবিলায় সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর তা করতে হলে খরচ বাড়বে।
মেট্রোরেল প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমআরটি লাইন-১-এর পাতাল রেলের কাজের ব্যয় উড়ালের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি লাগবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, পাতাল রেলের কাজ খুবই চ্যালেঞ্জিং। এর পরিচালনা ব্যয় চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। তাই এখন থেকেই কর্তৃপক্ষকে যাত্রী ভাড়ার পাশাপাশি বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। বৃহস্পতিবার সময়ের আলোর একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এমআরটি-১ প্রকল্প বাস্তবায়নে সাশ্রয়ী ও স্বস্তির উন্নয়ন হবে, নাকি হবে শ্বেতহস্তীর উন্নয়ন? কারণ টেকসই উন্নয়নের শর্ত হলো কম খরচে উন্নয়ন কাজ করা। কাজেই এ উন্নয়ন কাজকে পরিকল্পিত উপায়ে বেগবান করা না গেলে খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রাতে পড়বে এর বিরূপ প্রভাব।
পাতাল রেল চালুর পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ২৪ মিনিট। কমলাপুর থেকে পূর্বাচল যাওয়া যাবে ৪০ মিনিটে। ২০২৬ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-১ নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় সরকার। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে উভয় রুটে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। প্রকল্প বড় কথা নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেন দেশের মানুষ উপকৃত হয়। পাতাল রেলে যেমন অধিকসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে, তেমনি যানজটে ভোগান্তি এড়াতে পারায় যাত্রীদের সময়ও অনেক বাঁচবে। ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হ্রাস পাবে। অর্থাৎ প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জীবনযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে। নগরবাসীর স্বার্থেই প্রকল্পের খরচ না বাড়িয়ে সার্বিক কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।