প্রকাশ: বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:০৮ এএম (ভিজিট : ৯০)
অভিষেক দিনেই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। সেখানে অভিবাসী বিতাড়ন সংক্রান্ত ইস্যুও রয়েছে। ট্রাম্পের ওই কঠোর পদক্ষেপে মার্কিন নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন লাখ লাখ ভারতীয়। খবর বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নীতি বাতিলের কার্যক্রম শুরু সংক্রান্ত আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদেশটি বাস্তবায়ন হলে আর কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন না।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ট্রাম্প এ নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত বছর তিনি এ নীতিকে ‘হাস্যকর’ বলেন। অথচ দেড়শ বছরের পুরনো এই নীতি দেশটিতে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং নাগরিকত্বের শর্ত পূরণকারী সব ব্যক্তি দেশটির এবং যে অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন ওই রাজ্যের নাগরিক হবেন। ফলে শুধু নির্বাহী আদেশেই রাতারাতি এই নীতি পরিবর্তন হচ্ছে না বরং নীতি বাতিলে কার্যক্রম শুরু হলো।
পরিস্থিতি বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একগুয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে ফিরে আসবেন না। অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে তিনি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নীতি বাতিল করবেন। এতে ১৬ লাখ ভারতীয় মার্কিন নাগরিকত্ব হারাতে যাচ্ছেন। ২০২২ সালে মার্কিন আদমশুমারি বিশ্লেষণ করে জরিপ প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয়-আমেরিকান বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে তারা আইনত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই আইনটি চূড়ান্তভাবে বাতিল হলে এই ১৬ লাখ ভারতীয়-আমেরিকান নাগরিকত্ব হারাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর পদক্ষেপে দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি বাতিল হয়ে গেছে অনেকের মতো মারগেইলস টিনোকোরও। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে কেঁদে ফেলেন তিনি। কলম্বিয়ার নাগরিক মারগেইলস টিনোকো (৪৮) বলছিলেন, ‘আমার জীবনে আর কী হবে, আমি জানি না।’ দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এখন ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে সপরিবার ফেরত যাওয়ার হুমকিতে পড়লেন।
সোমবার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের প্রবেশের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে ধারাবাহিক কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।
এদিকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি হতে পারে, কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি কতজন ভারতীয় অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এটি একপ্রকার ভারতের উদ্যোগ। যাতে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না হয় এবং বাণিজ্যিক সংঘাত এড়ানো যায়। ভারত আশা করছে, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই পদক্ষেপের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় নাগরিকদের বৈধ অভিবাসনের সুযোগ রক্ষা করবে। বিশেষত, ছাত্র ভিসা এবং এইচ-১বি কর্মী ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথ বন্ধ না করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে উৎসাহিত করতে চাইছে ভারত। ২০২৩ সালে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার এইচ-১বি ভিসার মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সাল জানিয়েছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার অংশ হিসেবে, উভয় পক্ষ অবৈধ অভিবাসন রোধে কাজ করছে। এর মাধ্যমে বৈধ অভিবাসনের জন্য নতুন পথ তৈরি হবে।
সময়ের আলো/আরএস/