পতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আশার হাতছানি দিচ্ছে শেয়ারবাজার। দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে শেয়ারবাজারে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকও বেড়েছে। একই সঙ্গে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন এখন ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। যার ফলে হতাশা থেকে বের হয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারে সক্রিয় হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে মূল্যসূচকও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাজারটিতে দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই উভয় শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়ল।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৬০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। এমন পতনের পর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার।
আর মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে লেনদেনের শেষদিকে কিছু বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলে নেওয়ার জন্য বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা ছোট হয়ে আসে। সেই সঙ্গে আটকে যায় সূচকের বড় উত্থান। তবে দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির এবং ৮০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২০২ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৯ কোটি ১৪ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২৬ কোটি ৯২ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ৩ ডিসেম্বরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এটিএন টেলিকমের ১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, আফতাব অটোমোবাইল, বেস্ট হোল্ডিং, ড্রাগন সোয়েটার, ওরিয়ন ফার্মা এবং লাভেলো আইসক্রিম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪২.৯৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৩৪ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১.৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৫১১ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৫.০৩ পয়েন্ট বেড়ে ৯৪৯ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৬০.০৮ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৮৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সিএসইতে মোট ১৮৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯৭টি কোম্পানির, কমেছে ৬২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮টির। দিনশেষে সিএসইতে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
সময়ের আলো/আরএস/