ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫

প্রশংসার আশায় ইবাদতের ক্ষতি
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম  (ভিজিট : ২৭৪)

ইবাদত আল্লাহর বিধান। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়ই ইবাদত করা যায়, মানুষের প্রশংসা লাভের আশায় ইবাদত করা যায় না। মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে ‘রিয়া’ হয়ে যায়। রিয়া শব্দের অর্থ হলো লোক দেখানো। মানুষকে উত্তম চরিত্র দেখিয়ে তাদের অন্তরে নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাকে রিয়া বলে।

ইমাম গাজ্জালী (র.) বলেন, লোক দেখানো ইবাদতের মাধ্যমে নিজের মহত্ত্ব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই হলো রিয়া। জেনে রেখো রিয়া হারাম আর রিয়াকারী আল্লাহ তায়ালার কাছে অভিশপ্ত। কেয়ামতের ময়দানে তার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বেখবর; যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে এবং নিত্যব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না। (সুরা মাউন : ৪-৭)

মদিনায় মুনাফিকরা ইসলামের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য এবং মুসলমানদের দেখার জন্য নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগি করত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আল্লাহ পাক বলেন, অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায় একান্ত শিথিলতা ও লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে (সুরা নিসা : ১৪২)। রিয়া এক ধরনের ধোঁকা ও প্রতারণা বিধায় হারাম। রিয়াকারীর অন্তরে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভয়ের চেয়ে দুর্বল বান্দার ভয় বেশি থাকে এমনকি আল্লাহকে বাদ দিয়ে বান্দাকে খুশি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। এদিক দিয়ে রিয়াকারী বান্দাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।

রিয়া এক ধরনের প্রতারণা ও ভণ্ডামি। রিয়াকারী কেবল মানুষের সঙ্গে নয় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। তাই সে বড় প্রতারক ও ভণ্ড। জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কেয়ামত দিবসে আমার নাজাতের উসিলা কী হবে? উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, তুমি আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করো না। লোকটি বলল, আমি কীভাবে আল্লাহকে ধোঁকা দেব? নবীজি (সা.) বললেন, কাজ তো আল্লাহ যা হুকুম করেছেন তাই করবে, কিন্তু উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু। রিয়া থেকে বেঁচে থেকো, কেননা রিয়া হচ্ছে শিরক। কিয়ামত দিবসে সব মাখলুকের সামনে রিয়াকারীদের চারটি নামে ডাকা হবে-১. কাফের, ২. পাপী, ৩. দাগাবাজ ও ৪. ক্ষতিগ্রস্ত। আরও বলা হবে, তোমার সব আমল বরবাদ, তোমার প্রতিদান হয়ে গেছে। আজ তোমার জন্য কিছুই নেই। হে প্রতারক! তুমি যার জন্য আমল করেছিলে আজ তার কাছ থেকে সওয়াব আদায় করো। আরও বর্ণিত আছে যে, রোজ কেয়ামতে এরূপ একটি প্রকাশ্য ঘোষণা শোনা যাবে যে, তারা আজ কোথায় যারা মানুষের ইবাদত করত? দাঁড়িয়ে যাও এবং যাদের ইবাদত করতে তাদের কাছ থেকেই প্রতিদান গ্রহণ করো। (ইমাম গাজ্জালী (র.), মিনহাজুল আবেদিন, পৃষ্ঠা : ২৩২)

রিয়া আমলকে নষ্ট করে দেয়, রিয়াকারীর ওপর আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। পরকালে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যায়। আর এটি একটি মারাত্মক অন্তর ব্যাধি। সুতরাং রিয়া থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে বাঁচতে হবে। তার পরিবার ও সন্তানদের বাঁচাতে হবে। রিয়া থেকে বাঁচার জন্য কিছু করণীয় বর্ণনা করা হলো। প্রথমত রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে যেহেতু অন্যের কাছ থেকে মান-মর্যাদা ও প্রশংসা ইত্যাদি পাওয়ার আকাক্সক্ষা থাকে, বিধায় প্রথমে রিয়াকারীর অন্তর থেকে ওই সব ধ্বংসশীল আশা-আকাক্সক্ষাগুলো ধুয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত রিয়া হলো ইখলাসের বিপরীত অর্থাৎ যার অন্তরে রিয়া আছে তার অন্তরে ইখলাস নেই। ইখলাস অর্জন করলে রিয়া দূরীভূত হবে। সুতরাং ইখলাসের মাধ্যমে রিয়া থেকে বাঁচা সম্ভব। 

তৃতীয়ত যেহেতু এসব গুনাহের মূল উৎস প্রদানকারী হলো নফস শয়তান। সেহেতু সর্বদা শয়তানি কর্মকাণ্ডের বিপরীত কাজ করতে হবে। চতুর্থত এই ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য আরেক উপায় হলো হক্কানী-রব্বানী আলেমেদ্বীন ও পীর-মুর্শিদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাজকিরায়ে নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা এমন আলেমের মজলিসে বসো যিনি পাঁচটি (ধ্বংসাত্মক) বস্তু থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে পাঁচটি (কল্যাণকর) বস্তুর প্রতি উৎসাহিত করেন।

যথা-এক. দুনিয়ার প্রেম থেকে বের করে তাকে তাকওয়া বা পরহেজগারির প্রতি উৎসাহিত করে। দুই. রিয়া থেকে মুক্ত করে ইখলাসের শিক্ষা দেয়। তিন. অহংকার থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে নম্রতার শিক্ষা দেয়। চার. অলসতা থেকে মুক্ত করে উপদেশ দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। পাঁচ. অজ্ঞতা থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করে। পঞ্চমত এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার সবশেষ পন্থা হলো মহান আল্লাহ দরবারে রিয়ামুক্ত জীবনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া ভালো-মন্দ করা না করার কোনো ক্ষমতা কারও নেই। রিয়া থেকে বাঁচার উপরোল্লেখিত বিষয়গুলো অব্যাহত রাখার সঙ্গে দোয়াও চালু রাখতে হবে।

নবীজি (সা.) নিজেও এভাবে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে নেফাক থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার জিহ্বাকে মিথ্যা থেকে এবং আমার চোখকে খেয়ানত থেকে পবিত্র রাখো। চোখের খেয়ানত ও অন্তরে গোপন অবস্থা সম্পর্কে তুমি অবহিত (গুনিয়াতুত তালেবিন : ৪৫৫)। পরিশেষে আমরা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে আমরা এ গর্হিত ও ঘৃণিত চরিত্র থেকে মুক্ত লাভের আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্ট অর্জন করার চেষ্টায় শক্তি প্রার্থনা করি। আল্লাহ পাক আমাদের রিয়ামুক্ত রেখে তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করার তওফিক দান করুন।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close