প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫০ এএম (ভিজিট : ৩২৬)
আজ ১৩ জানুয়ারি, দিনাজপুরের হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি দিবস। ৩০ বছর আগে এদিন হিলি রেলস্টেশনে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেই দিনের কথা আজও ভুলতে পারেনি হিলিবাসী। দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয়রা।
জানা গেছে ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি, দিনটি ছিল শুক্রবার। রাত সোয়া ৯টার দিকে গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ৭৪৮ নম্বর আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময়ই ঘটে ভয়াবহ মুখোমুখি সংঘর্ষ। এতে বিকট শব্দে গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে আন্তঃনগর ট্রেনের ওপর উঠে যায়।
ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় দুটি ট্রেনের অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক। নিহতদের অনেকের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে। পরে স্থানীয় মানুষ, রেলওয়ে একতা ক্লাবের সদস্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সহায়তায় মরদেহ উদ্ধারসহ আহতদের দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। সে সময় সরকারিভাবে নিহতের সংখ্যা ২৭ জন ঘোষণা করা হয়। আর আহতের সংখ্যা বলা হয় শতাধিক।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিএনপি সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ঘোষণা দেন নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের। অনেকে ক্ষতিপূরণ পেলেও কয়েকজন আজও পাননি তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা।
হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও শরীর শিউরে উঠে। সে রাতে দুর্ঘটনার সময় আমরা রেলওয়ে একতা ক্লাবে বসেছিলাম। এমন সময় একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে ছুটে যাই রেলস্টেশনের দিকে। গিয়ে দেখি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, শত শত মানুষের আহাজারি। ক্ষতবিক্ষত মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ পড়ে আছে। আহতরা বাঁচার জন্য আহাজারি করছে, অনেকের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুঝে উঠতে পারছিলাম না আমার কী করা উচিত। অবশেষে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে হিলি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এত মরদেহ, এত রক্তমাখা ক্ষতবিক্ষত দেহ আগে কখনো দেখিনি। সেই দিনের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি আজও হিলির মানুষকে আতঙ্কে রাখে।
ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার ও এলাকার লোকজন জানান, তাৎক্ষণিক ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিক তদন্তে হিলি রেলস্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করেন।
হিলি রেলওয়ে একতা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বুলু জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও হিলি রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল হবে। পাশাপাশি আলোচনা সভা ও সকাল থেকে কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।