প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম (ভিজিট : ১৪২)
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে দ্রুতই নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইল। সম্প্রতি হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ার পর স্থানীয় সময় শনিবার এ অনুমোদন দেয় দখলদার সরকার। রোববার ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচনায় অগ্রগতির পর সেনাদের দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে নেটজারিম করিডোর ব্যবহার করে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। যা গাজাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে।
যদিও গাজায় এরই মধ্যে ব্যাপক অবকাঠামো ও অবস্থান গড়ে তুলেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তবুও তারা বলেছে যে, তারা তাদের ‘সেনা সরিয়ে নিতে প্রস্তুত’ এবং সরকারের সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর (হামাস) যেকোনো চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঠিক কবে নাগাদ তাদের সেনা সদস্যদের গাজা থেকে সরিয়ে নেবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমটি।
এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছিল যে, আলোচনার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নেয়া এবং শিন-বেতের প্রধান রোনেন বারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কাতারে পাঠানো হবে। সেই মোতাবেক ইসরাইলের ওই দুই প্রতিনিধি আলোচনার জন্য শনিবার কাতারে পৌঁছান।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য ওই ঘোষণা দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনথের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির ৯০ শতাংশ বিবরণ ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছুই জানায়নি গণমাধ্যমটি।
এদিকে গত ৫ দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৭০ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস। রোববার এক প্রতিবেদনে আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিফেন্স সার্ভিস নিহতদের বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে শুধু বলেছে, ফিলিস্তিনি অঞ্চলজুড়ে বেশ কয়েকটি এলাকা লক্ষ্য করে চালানো হামলায় এসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুরা ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে চলছে। এই যুদ্ধ এখন ১৬তম মাস পার করছে। গত ৮ জানুয়ারি ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, নতুন বছরে আক্রমণ, বঞ্চনা ও ঠান্ডার ঝুঁকি আরও বেশি মৃত্যু ও ভোগান্তি নিয়ে এসেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া লক্ষাধিক বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ইসরাইলি আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও রয়েছে। অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় গাজায় চলমান সহিংসতা মানবিক সংকট আরও গভীর করছে। যেখানে নাগরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব পরিস্থিতিকে ক্রমেই অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।