ই-পেপার মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

অনন্তকাল
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:০৫ এএম  (ভিজিট : ২৯৪)
করোনার এই বদ্ধ সময়ে কোথাও বের হওয়ার নেই। ঘরবন্দি মানুষ। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ নেই। বেশিরভাগ অফিস-আদালত বন্ধ। কারও বাসায় কেউ আমন্ত্রিত হয় না। চারদিকে শুধু মৃত্যু আতঙ্ক। যা কিছু যোগাযোগ অনলাইনে। অনলাইনেই চলে অফিস-আদালত। ছাত্রছাত্রীদের কলতানে মুখরিত হয় না স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণ। এমনকি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা সবই চলছে অনলাইনে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় তো নেই। দিনে দিনে করোনা তার বীভৎস ভয়ংকর রূপ উন্মোচিত করছে। 

মৃত্যু সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। দিনের পর দিন অলস ঘরে বসে থাকতে থাকতে মানুষ ক্রমাগত হাঁপিয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু চিন্তা গেড়ে বসেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনা ভয় থেকে দূরে থাকতে অনলাইনে নিজেদের মধ্যে কথা বলে, গান শুনে, কবিতা লিখে, গল্প লিখে সময় কাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

নোমান একজন প্রখ্যাত গল্পকার। সে তার ফেসবুক বন্ধুদের জন্য এ রকম একটি উদ্যোগ নিল। একটি খেলার আয়োজন করল, গল্প লেখার খেলা। নোমান ওপেন চ্যালেঞ্জ দিল অর্থাৎ ফেসবুকের যেকোনো বন্ধু গল্প লিখতে পারবেন। গল্পকার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কবি, গায়ক, শিক্ষক, পাঠক অথবা অন্য যেকোনো প্রোফেশনে থাকুক অথবা নাই থাকুক। মোট কথা যে কেউ দুশ শব্দের মধ্যে করোনা বিষয়ক গল্প লিখতে পারবেন। সময় বাহাত্তর ঘণ্টা। যে কেউ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ বা বর্জন করতে পারবেন। তবে সেটি ফেসবুকে জানাতে হবে। আর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হলে অবশ্যই নিয়ম মেনে গল্প পোস্ট করতে হবে। একেক রাউন্ড খেলা শেষে প্রথম তিনজনকে পুরস্কৃত করা হবে। গল্পের লাইক-কমেন্টসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে শীর্ষ তিন। লাইক পয়েন্ট ‘এক’ এবং কমেন্ট পয়েন্ট ‘দুই’। এভাবেই খেলা এগিয়ে যাবে। শুরু হলো খেলা।

কয়েক দিন ধরে মিথিলার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ঠান্ডা জ্বর, কাশি বেশ ভোগাচ্ছে। নিজে যতটুকু জানে সেই মতো ওষুধ খাচ্ছে, তবে ফল খুব একটা পাচ্ছে না। ডাক্তার দেখানো দরকার। বাসা থেকে বের হতেই ভয় লাগে। শহরজুড়ে সব অচেনা মুখোশ। ঘরে বসে থেকে মনে হয় হাড়ে শেকড় গজিয়ে যাচ্ছে। নোমানের ফেসবুক বন্ধু মিথিলা। সে কবিতার লোক, লোকে কবি বলে ডাকে। কবিতা লিখেছেও বিস্তর গল্প কখনো লেখা হয়নি। তবুও চ্যালেঞ্জটা নিল মিথিলা। ক্লান্তিকর সময় থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেল।
মিথিলাদের বাসার খুব কাছেই একটা ছোট বস্তি আছে। প্রতিদিন বস্তি পেরিয়েই ওকে বড় রাস্তায় উঠতে হয়। যেতে-আসতে ওদের জীবন ছবির খণ্ড চিত্র দেখা হয়ে যায়। সেই আলোকে করোনা আক্রান্ত বস্তি শিশুর করুণ পরিণতি নিয়ে লিখল এক হৃদয় ছোঁয়া গল্প। পোস্ট করে অপেক্ষা লাইক-কমেন্টসের। পড়ছে ক্রমাগত। কাছের, দূরের বন্ধু, সজ্জন কেউ বাদ যাচ্ছে না। তারপরও প্রথম তিনে নেই মিথিলা। কিছুটা মন খারাপ হলেও দমে যাওয়ার পাত্র সে নয়। এবার হয়নি তাতে কি! রাউন্ড আরও আছে।

পরবর্তী রাউন্ড আরেকটু কঠিন, গল্পের শব্দ সংখা দেড়শ এবং সময় কমে গিয়ে দাঁড়াল ষাট ঘণ্টায়। ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, তারপরও শরীরটা ঠিক আয়ত্বের মধ্যে নেই। পুরোনো অ্যাজমার টান উঠে মাঝেমধ্যেই। খুশখুশে কাশিটাও ভোগাচ্ছে ভালোই। এবারও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মিথিলা। গলায় মাফলার পেঁচিয়ে লিখতে বসল। যতক্ষণ লেখার মধ্যে থাকে ততক্ষণ সব ভুলে থাকা যায়, কাশিটাও মনে হয় জ্বালায় কম। গল্প লেখার উত্তেজনায় অন্য ব্যথা বেদনা যেন কিছু সময়ের জন্য ঝিম মেরে থাকে। করোনা ধনী-গরিব কাউকেই ছাড় না দিলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্টের সীমা-পরিসীমা নেই। তার ওপর সে যদি হয় দেহপসারিণী তা হলে তো কথাই নেই। নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই, জমানো কোনো অর্থ নেই। করোনাকালে প্রান্তিক শ্রমজীবী দেহপসারিণীর জীবনের বেদনার্ত আর্তনাদ ফুটে উঠল মিথিলার গল্পের শরীরজুড়ে। গল্প শেষ করে পোস্ট দিতেই প্রশংসার বন্যায় ভেসে যেতে লাগল। এবারও অনেক লাইক-কমেন্টস পড়ল। কিন্তু তারপরও প্রথম তিনে জায়গা হলো না মিথিলার।

শেষ রাউন্ড। ক্রমশও প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হচ্ছে। এবার শব্দ সংখা একশ, সময় কমে আটচল্লিশ ঘণ্টায় এসেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিথিলার শরীর খারাপের মাত্রাও বাড়ছে। মনে হচ্ছে গলার কাছে যেন একটা কিছু দলা পাকিয়ে আটকে আছে, গরম পানি খাচ্ছে তবুও নামছে না। অ্যাজমার টানটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছেই না। কাশতে কাশতে বুকে দম পাচ্ছে না। ভয় এসে গলা পেঁচিয়ে ধরল। তবে কি করোনা ধরে ফেলল মিথিলার মতো কঠিন মনের মানুষটাকে। শরীর আর কিছুতেই বশে থাকছে না। কবিতার মানুষ গল্পের মজা পেয়ে গেছে। গল্প লেখার চ্যালেঞ্জটা না নিয়ে পারল না। লেখা শুরু করল।
মিথিলার শরীর বেশি রকম খারাপের দিকে যাচ্ছে। ‘আইইডিসিআর’ এ বার কয়েক কল করে যোগাযোগ করতে পারল না। ব্যস্ত দেখাচ্ছ। করোনা রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে আইইডিসিআরের 
সঙ্গে যোগাযোগ কি আর হবে! মিথিলা মোবাইলের কল অপশন থেকে সরে এসে ফেসবুকের গল্প 
লেখায় আসে। 

শব্দের পর শব্দ বসিয়ে গল্প লেখার চেষ্টা করে। কিন্তু মাথা-হাত কোনোটাই ঠিকমতো কাজ করছে না। এদিকে গল্প পোস্ট করার সময়ও কমতে থাকে...। গল্পটি শেষ করতে পারছে না। শরীরের সবটুকু 
শক্তি জড়ো করে চেষ্টা করে যাচ্ছে, পারছে না। নিজের জীবনের সময়ও যেন কমতে থাকে। আরও কমতে থাকে...।

সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close