ই-পেপার মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ই-পেপার

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভ্রূণহত্যা মহাপাপ
প্রকাশ: শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম  (ভিজিট : ১৭৪)
পৃথিবীর প্রায় যুগের মানবসভ্যতায় এ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ঠাঁই পেয়েছিল যে, জন্মহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলে খানা-খাদ্যের অভাব দেখা দেবে। মানুষ অনাহারে থাকবে। এই ভয়ে কেউ কেউ বাচ্চা জন্মের পূর্বেই তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়।

ইসলাম এমন বর্বর রীতি ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে চেয়েছে সবসময়, এ জন্য ভ্রূণ হত্যাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছে। এটা মূলত শয়তানের মারাত্মক ধোঁকা। সে-ই মানুষকে বিভিন্নভাবে দরিদ্রতা, অভাব-অনটনের ভয় দেখিয়ে ভ্রূণ হত্যার মতো গর্হিত অপরাধে লিপ্ত করতে চায়। অথচ জীবিকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজের কাছে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিজের কাছে রাখেননি। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফুজে, যেখানে মানুষের জীবন, মৃত্যু, জীবিকাসহ সবকিছু লিখে রাখা হয়েছে) লিপিবদ্ধ রয়েছে।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬)। কাজেই যার জন্য যে পরিমাণ জীবিকা বরাদ্দ আছে, তা সে পাবেই।

জীবিকার ভয়ে ভ্রূণহত্যা শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ তো বটেই, এটা অমানবিকতাও। আল্লাহ তায়ালা এমন গর্হিত কাজ নিষেধ করে বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। তাদের এবং তোমাদের আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। এদের হত্যা করা অবশ্যই মারাত্মক অপরাধ’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩১)। মহানবী (সা.) মুসলমানদের থেকে যে কয়টা বিষয়ের অঙ্গীকার নিতেন সেগুলোর একটি হলো সন্তানদের হত্যা না করা। আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়টি পবিত্র কুরআনেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে নবী! ইমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না,জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভালো কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ১২)

সন্তান হত্যা চরম গর্হিত ও অমানবিক কাজ। কিন্তু শয়তান এটাকে জনসংখ্যার বৃদ্ধি, জীবিকার অভাবসহ বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে মানুষের সামনে মুখরোচক সেøাগানের মতো বানিয়ে দিয়েছে। অবস্থা এখন এমন হয়েছে, এটা যে একটা অমানবিক অপরাধ, সেই বোধবুদ্ধি ও অনুভূতিও মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত হয় না। আল্লাহ তায়ালা শয়তানের এমন কূটচালের কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমনভাবে বহু মুশরিককে তাদের (শয়তান) উপাস্যরা বুঝিয়ে রেখেছিল যে, সন্তান হত্যা করা বড় ভালো কাজ। যেন তারা তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারে এবং তাদের ধর্মকে বিভ্রান্তিপূর্ণ করে দিতে পারে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৩৭)

ভ্রূণহত্যা শাস্তিযোগ্য পাপ। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যে মানবজীবনের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। মূর্খ আরবরা কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়াকে লজ্জাজনক মনে করত এবং তাদের জীবন্ত কবর দিয়ে ফেলত। ইসলাম এ প্রথার মূলোৎপাটন করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’ (সুরা তাকবির, আয়াত: ৮-৯) অর্থাৎ হাশরে জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধের কারণে তাকে হত্যা করা হলো। এই জিজ্ঞাসার মূল উদ্দেশ্য হলো, সে নিজের নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি আল্লাহ তায়ালার সামনে পেশ করুক। যাতে এর প্রতিশোধ নেওয়া যায়। এমন অমানবিক কাজের শাস্তি দেওয়া যায়। কেয়ামত দিবসে প্রত্যেককেই স্বীয় কর্ম জিজ্ঞেস করা হবে। তবু জীবন্ত প্রোথিত বাচ্চার কথা সবিশেষ উল্লেখ করার কারণ হলো, এই মজলুম শিশুকে স্বয়ং তার পিতামাতা হত্যা করেছে। তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার পক্ষে কোনো বাদী নেই। বিশেষত গোপনে হত্যা করার কারণে কেউ জানতেই পারেনি, সাক্ষ্য দেবে কীভাবে? বিচার দিবসে ন্যায়বিচারের আদালত কায়েম হবে, তাতে এমন অত্যাচার ও নিপীড়নকেও সর্বসমক্ষে আনা হবে, যার কোনো সাক্ষী নেই। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের এ জুলুমের শাস্তি প্রদান করবেন। (মাআরিফুল কোরআন)

গর্ভপাত হত্যার অন্তর্ভুক্ত। শিশুদের জীবন্ত প্রোথিত অথবা হত্যা করা মহাপাপ ও গুরুতর অপরাধ। চার মাসের পর গর্ভপাত করাও এই অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা চতুর্থ মাসে গর্ভস্থ ভ্রূণে প্রাণের সঞ্চার হয় এবং সে জীবিত মানুষের মধ্যে গণ্য হয়। একান্ত অপারগ না হলে চার মাসের পূর্বেও গর্ভপাত হারাম, অবশ্য প্রথমোক্ত হারামের চেয়ে কিছুটা কম। কারণ এটা জীবিত মানুষের প্রকাশ্য হত্যা নয় (তফসিরে মাজহারি)। আজকাল জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে এমন সব পদ্ধতি আবিষ্কার হয়ে গেছে, যাতে গর্ভ সঞ্চারই হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) একেও ‘গোপনভাবে শিশুকে জীবন্ত প্রোথিত করা’ আখ্যা দিয়েছেন (নুখাবুল আফকার : ১০/৩৭৯)। যদি এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যাতে বীর্য গর্ভাশয়ে না যায়, সাময়িকভাবে এর অনুমোদন থাকলেও এটি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আর জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে প্রচলিত ওষুধপত্র ও ব্যবস্থাপত্রের কতগুলো এমন, যার দ্বারা সন্তান জন্ম স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইসলামি শরিয়ত কোনোক্রমেই এর অনুমোদন দেয় না।

মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী
 দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close