
বছরজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিকে এমনিতেই গ্যাসের চাপ কম থাকে। শীতে এ চাপ আরও কমে। তার ওপর গত কয়েক দিন ধরে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। রীতিমতো হাহাকার শুরু হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে।
জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে সংকট এতটা তীব্র হয়েছে যে কিছু এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসই থাকছে না; কিছু এলাকায় থাকলেও সরবরাহ সামান্য। তা দিয়ে রান্নার কাজ করা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় ২৪ ঘণ্টাই গ্যাসের চাপ এতটাই কম থাকছে যে, এক পাতিল পানি গরম করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে বা নতুন করে সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) মঙ্গলবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, বুধবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এক্সিলারেট এনার্জি পরিচালিত টার্মিনাল থেকে ৭২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ সময় অন্য টার্মিনাল থেকে দিনে ৫৭ থেকে ৫৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। দিনে ১৫ থেকে ১৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যাবে। এতে দেশের কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। শনিবারই এক্সিলারেটের টার্নিমাল থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। তবে দুটি এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে গ্যাস সংকটের সুরাহা পুরোপুরি হচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার দাবি, দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। তার উপরে শীতে পাইপে গ্যাসের ফ্লো কমে যায়, শীত বাড়লে আরও কমে। সেজন্য গ্যাসের চাপ কম। এখন অফ পিক চলছে, এর চেয়ে বেশি সরবরাহ করা সম্ভব না। আমাদের এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতাও সিমিতি, তাই চাইলেও বেশি এলএনজি এনে সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুটের বেশি। দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো। আর স্থানীয় উৎপাদন মিলিয়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হতো। শুক্রবার সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২৪০ কোটি ঘনফুট। সেজন্য গ্যাসের চাপ কম। চলতি বছর বেশি এলএনজি আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে কেনা হচ্ছে। কয়েক দিন পরে সমস্যা হবে না।
খিলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিচ্ছি। তার ওপর বছরের বেশিভাগ সময় গ্যাসের চাপ কম থাকে। গত কয়েক দিন ধরে পাইপে গ্যাস নেই বললেই চলে। বাসায় রান্না করা যাচ্ছে না।
নারিন্দা এলাকার জামাল বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস থাকছে না। সরকার কি এগুলো দেখে না। নতুন করে সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। বাড়তি টাকা খরচ হলো। আবার মাসে মাসে বিলও দিতে হচ্ছে। গ্যাস না থাকলে বিল কেন দেব।
গুলবাগের বাসিন্দা আনিস জানান, আমার বউ চাকরি করে, সকালে যাওয়ার আগে রান্না করে যায়। গ্যাস না থাকায় সকালে রান্না করা যাচ্ছে না। বিকালে অফিস শেষে এসে যে রান্না করবে সে উপায়ও নাই। লাইনে গ্যাস থাকে না। বাধ্য হয়ে ইলেক্ট্রিক চুলা কিনে দিয়েছি। চুলা কিনতে খরচ হয়েছে, আবার বিদ্যুৎ খরচও বেশি হবে। এই টাকা তো তিতাস দেবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকোশলী মো. রফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, মেইনটেন্যান্সে থাকা এক্সিলারেটের ভাসমান টার্মিনালটি থেকে এলএনজি সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। এখন ৮০০ এমএমসিএফডির উপরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্যাস সরবরাহের পিক এবং অফ পিক সময় রয়েছে, এখন কিছুটা কম সরবরাহ হচ্ছে। তবে এক্সিলারেটের টার্মিনাল থেকে সরবরাহ শুরু হলে সংকট কিছুটা কমবে। সামনে এলএনজি সরবরাহ বাড়বে, তখন সমস্যা হবে না। এখন কিছুটা সাশ্রয় করা হচ্ছে।