পৌষ মাস এখন ঠিক মধ্যভাগে। পঞ্জিকার পাতায় ভরা শীতকাল। তারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে হিমেল বাতাসে জবুথবু জনজীবন। সেই সঙ্গে চরম দুর্ভোগে পতিত হয়েছে সাধারষ মানুষ থেকে শুরু করে গৃহপালিত ও অসহায় পশুপাখিরাও। কিছু কিছু জেলায় বেলা গড়ালেও দেখা মিলছে না সূর্যের।
কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ার যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে সতর্কতার সঙ্গে যাতায়াত করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। আবার কিছু কিছু জেলাতে শীত কম অনুভূত হতেও দেখা গেছে। আর ২০২৫ সালের প্রথম মাসেই কয়েক দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে এবার জানুয়ারিজুড়ে শীত বেশি পড়বে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিকগণমাধ্যমে বলেন, জানুয়ারিতে একটি থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা আজ থেকে কমে আসলেও রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, সিলেট বিভাগে শীতের অনুভূতি বাড়বে বুধবার থেকে। ধীরে ধীরে মধ্যাঞ্চল হয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তার হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। প্রাথমিকভাবে এটি শুক্রবার পর্যন্ত থাকতে পারে। আগামী কয়েকদিন কুয়াশার পরিমাণও বেড়ে যাবে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
এদিকে সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ববঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
বুধবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এদিন সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, তীব্র শীত আর কনেকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবি মানুষগুলো।শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের অনেকেই। আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে।বেলা গড়ালেও দেখা মিলছে না সূর্যের। সকাল সাড়ে ১০টায়ও প্রকৃতি ছিলো ঘন কুয়াশায় ঢাকা। কুয়াশার ঘনত্ব বেশি হওয়ার যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে সতর্কতার সাথে যাতায়াত করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা সূর্যের উত্তাপ না থাকায় হিমেল বাতাসে কমতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হতে থাকে।
তবে জেলা প্রশাসন বলছে, এর মধ্যে শীত নিবারনে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৯ লাখ টাকা ও ১২ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিতরণ চলছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, গত একমাস ধরে এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠানামা করছে। আগামীতে আরও তাপমাত্রা কমে এ জেলার উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সময়ের আলো/এম