স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, আমাদের সব জায়গায় সিস্টেমে সমস্যা আছে। এই যে বিভিন্ন আইন আছে, সেই আইনের প্রয়োগ, আইন না মানা সেটা নিয়ে ফলোআপ করা হয় না। আইন নানান কারণে নাও মানা হতে পারে। যেমন- জবাবদিহিতার অভাব, আবার অনেক ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকলেও সেটা নিয়ে কেউ চার্জ করে না। মন্ত্রণালয়ের কাজ করে দেখছি যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই সমস্যা আর অনিয়ম। এই অবস্থা উত্তরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীরতে আয়োজিত ঔষধ শিল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমার মনে হয় আমরা সবাই যে জায়গায় আছি প্রত্যেকেই যদি নিজেদের জায়গা থেকে একটু স্যাক্রিফাইস করি, একটু একটু করে যদি অভ্যাসটা আমরা তৈরি করতে পারি তাহলে দেশ হিসেবে আমরা আগাতে পারব। আর সমস্যা-অনিয়ম উত্তরণে কাজ আমরা করছি। এখন প্রয়োজন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যেসব জায়গায় ফাঁকফোকর, অনিয়ম আছে সেগুলা শুধরে নিয়ে আমরা যদি চেষ্টা করি তাহলে আমরা সাধারণ মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারব। এবার ২৪-এর আন্দোলনে যে অসংখ্য মানুষ আর ১৯, ২০ বছর বয়সী ছেলে চোখ, পা হারালো তাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আসুন আমরা একযোগে কাজ করি।
নূরজাহান বেগম বলেন, গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করে আমার জীবনে ৪৫ বছর কেটেছে। আমার মনে হয় ওদের কষ্টটা আমি জানি অনুভব করি। মাস দুয়েক আগে হোসাইন জিল্লুর আমাদের এখানে একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন ৮ থেকে ৯ শতাংশ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে যাচ্ছেন শুধু ঔষধ এবং চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে। কিন্তু সেখানেও তারা কোনো স্যাটিসফেকশন পাচ্ছে না। যদি ডাক্তার, মন্ত্রণালয় যারা ওষুধ প্রস্তুতকারী, বিক্রেতা সবাই যদি নিজেদের জায়গা থেকে আমরা একটু চেষ্টা করি তাহলে আমরা দেশের সাধারণ মানুষকে এ ব্যয়ভার থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারব।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আজকে মতবিনিময় সভায় আমরা রেগুলেটর, ম্যানুফ্যাকচারার এবং ডিসপেন্সারের সাথে বিস্তারিত কথা বলেছি। এছাড়া সামনে ডাক্তার এবং যারা ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের সাথে আমাদের বসার পরিকল্পনা আছে। আমরা বাকি দুই গ্রুপের সাথে কথা বলে আমরা সবাই মিলে ওষুধ শিল্পের জন্য কমপ্রিহেনসিভ একটা প্ল্যান তৈরি করব। এটা শুধু কোন মন্ত্রণালয় বা কোন ইন্ডাস্ট্রি নির্দিষ্ট কারো না। এটা একটা জাতির দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আমরা যার যার দায়িত্ব থেকে চেষ্টা করব। এটা বিজ্ঞানের বিষয়, মানুষের নৈতিক অধিকারের বিষয়, বাণিজ্যের বিষয়, স্বাধীনতার বিষয় সবগুলো যেন একটা ডিরেকশনে মুভ করে। একটা যেন আর একটার সাথে প্রতিঘাত সৃষ্টি না করে। স্বাস্থ্য রক্ষা যেন বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত না হয়, বাণিজ্য যেন স্বাধীনতা রক্ষার সাথে সম্পৃক্ত না হয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শামীম হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মনজুর কাদির আহমেদ, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মহিবুজ জামান, ডিজিডিএর পরিচালক আসরাফ হোসেন, বিসিডিএস পরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ।