২০২৪ সালের নববর্ষে রাত ১১ থেকে ১২টার তুলনায় পরবর্তী ১ ঘণ্টার বায়ুদূষণের পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং প্রায় ৪২ শতাংশ শব্দদূষণ বৃদ্ধি পায় বলে জানায় বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায় কেন্দ্র (ক্যাপস) নববর্ষ উদযাপনের সময় আতশবাজি পোড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দদূষণের উপর বৈজ্ঞানিক ফলাফল প্রকাশ এবং আতশবাজি ও ফানুসমুক্ত উদযাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানায়।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)- এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নববর্ষে রাত ১১ থেকে ১২টার তুলনায় পরবর্তী ১ ঘণ্টার বায়ু দূষণের পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ (বস্তুকণা) রেকর্ড হয় ২৪৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার যা বায়ুমান সূচকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসাবে বিবেচিত। আতশবাজি, পটকা বা এ-জাতীয় শব্দ সৃষ্টিকারী বস্তু সাধারনত পটাসিয়াম পারক্লোরেট, বিষাক্ত বেরিয়াম নাইট্রেট, পার্লাইট পাউডার, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম খাদ ও মাটি-পাথর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো পোড়ানোর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বায়ু দূষণকারী পদার্থ নির্গত করে, যার মধ্যে রয়েছে বস্তুকণার ও বস্তুকণা, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, এবং কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি। এই দূষকগুলো হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
ক্যাপসের গবেষণা দলের মাঠ পর্যবেক্ষনে দেখতে পায় যে, রাত সাড়ে ১১ থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয়েছে রাত ১২ থেকে সাড়ে ১২ পর্যন্ত। ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দ দূষণহার গতদিনের (৩০ডিসেম্বর) তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বেশীরভাগ সময় শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে ছিল। ৮০ ডেসিবলের অধিক শব্দ মানুষ সহ পশু-পাখির কানের বধিরতা সৃষ্টি করতে সক্ষম এমনকি এই শব্দ গর্ভপাত, শিশুমৃত্যু ও বয়স্কদের হার্টের ঝুঁকিও বাড়ায়। নববর্ষের উদযাপনের এই প্রচন্ড শব্দে পাখিরা উড়া-উড়ি করে এবং গাছে বা বিল্ডিঙের দেয়ালে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে এমনকি মারাও গিয়েছে।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নববর্ষ উদযাপনের সময় বায়ু এবং শব্দ দূষণের ফলে মানুষের জীবন ও পরিবেশের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ছে। বায়ুদূষক উচ্চ মাত্রা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ৮০-৯০ ডেসিবলের শব্দ দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আতশবাজি এবং পটকার কারণে পাখিরা আতঙ্কিত হয়ে উড়ে যায়। প্রায়ই গাছে বা ভবনের সাথে ধাক্কা খেয়ে তারা আহত হয় বা মারা যায়। ২০২৪ সালের নববর্ষে হাজারো পাখি আহত হয়েছিল। দূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ যে, গত ১২ ডিসেম্বর ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন উপলক্ষে নিয়মিত টহল ও তল্লাশিচৌকি বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশি তৎপরতাও বাড়ানো হবে জানিয়েছে ডিএমপি কমিশনার। তিনি আরও জানান উন্মুক্ত বা খোলা কোনো স্থানে আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।