বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৪ সাল। অনেক আনন্দময় প্রাপ্তির মাঝেও হারানোর বেদনা আমাদের আহত করেছে বিদায়ি বছরটি। এ বছর কবি, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ আলোকিত কিছু মানুষ আমাদের বিষাদের অন্ধকারে ফেলে চলে গেছেন চিরদিনের জন্য। তবে রেখে গেছেন তাদের মূল্যবান সৃষ্টিকর্ম। সেসব উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রস্থান নিয়েই আজকের আয়োজনÑ
খালেক বিন জয়েনউদদীন
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদদীন মারা যান ১৪ জানুয়ারি। খালেক বিন জয়েনউদদীন ১৯৫৪ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
হোসেনউদ্দীন হোসেন
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দীন হোসেন মারা যান ২০ মে। হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
অসীম সাহা
খ্যাতিমান কবি অসীম সাহা মারা যান ১৮ জুন। কবি অসীম সাহা পারকিনসন (হাতকাঁপা রোগ), কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অসীম সাহা। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। তার বাবা অখিল বন্ধু সাহা ছিলেন অধ্যাপক।
মাকিদ হায়দার
সত্তরের দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনীতি সচেতন কবি মাকিদ হায়দার মারা যান ১০ জুলাই। কবি মাকিদ হায়দারের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনার দোহারপাড়ায়। তার বাবা হাকিমউদ্দিন শেখ ও মা রহিমা খাতুন। সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। সাত ভাইয়ের বোনও ছিল সাতজন। মাকিদ হায়দারের ভাই রশীদ হায়দার, জিয়া হায়দার, দাউদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার সবাই সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত।
ড. মাহবুবুল হক
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক মারা যান ২৪ জুলাই। তিনি ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান ফরিদপুরের মধুখালী। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ড. গোলাম মুরশিদ
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, গবেষক, আভিধানিক, প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ মারা যান ২২ আগস্ট।
আশরাফুল আলম পিনটু
সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার আশরাফুল আলম পিনটু মারা যান ২৭ আগস্ট। আশরাফুল আলম পিনটুর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৫ মার্চ বরেন্দ্রভূমির নানাবাড়ি কাদিপুরে। দাদাবাড়ি তালপুকুর। বাবার বাড়ি রাজশাহী শহরের শালবাগান। দাদাবাড়ি আর নানাবাড়িতেই কেটেছে তার বেশিরভাগ সময়।
ড. মনিরুজ্জামান
ভাষাবিজ্ঞানী, গবেষক ও অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মারা যান ২৭ আগস্ট। অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৫ ফ্রেরুয়ারি। পুলিশ অফিসার বাবার কর্মস্থল ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার ঝিনাইদহে। পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরার আদিয়াবাদে। তার বাবার নাম মো. নাদিরুজ্জামান, মা মোসাম্মৎ ফরিদান্নেছা।
অঞ্জনা সাহা
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহার মৃত্যুর চার মাস পর মারা যান তার স্ত্রী কবি অঞ্জনা সাহা ২৯ অক্টোবর। অঞ্জনা সাহা একজন কবি ও রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজবাড়ী শহরে। সেখানেই শৈশবের প্রথম পর্যায় কাটে। বাবার চাকরির সূত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর ফলে পড়াশোনা করেন বিভিন্ন স্কুলে।
মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ মারা যান ২৬ নভেম্বর। মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের আসামের তিনশুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার প্রয়াত বাবা রহিমুদ্দিন আহমেদ আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন।
হেলাল হাফিজ
দেশবরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ মারা যান ১৩ ডিসেম্বর। হেলাল হাফিজ ৭ অক্টোবর ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
সময়ের আলো/আরএস/