প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম (ভিজিট : ৮২)
পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। সেখানে সংখ্যাগুরু সুন্নিরা। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীন বিবাদ আজও চলমান। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিমের অঞ্চলগুলোতে প্রায়ই শিয়াদের ওপরে হামলা চলে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের প্যারাচিনার শহরে বিষয়টি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
প্যারাচিনারের স্থানীয়রা বলছেন, গত মাসে শহরের ভেতরে ও বাইরে যাওয়ার প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওষুধের অভাবে মারা যাচ্ছে শিশুরা। খবর জিও নিউজ ও রেডিও ফ্রি ইউরোপের।
প্রায় চার লাখ জনসংখ্যার শহর প্যারাচিনারের একজন উপজাতীয় নেতা মুনাওয়ার হুসেন বলেন, আমরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে বসবাস করছি। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে আমাদের শিশুরা মারা যাচ্ছে। একজন ডাক্তার এবং একজন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখানে ওষুধের অভাবে কয়েক ডজন শিশু মারা গেছে। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে কর্তৃপক্ষ।
এই বছর কুররাম জেলার প্রধান শহর প্যারাচিনারে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক নিহত ও আহত হয়েছে। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুররাম জেলার প্রশাসনিক সদর দফতর প্যারাচিনারের বাসিন্দারা ৭ নভেম্বর রাস্তাগুলো আবার চালু করার দাবি জানায়।
এ ছাড়া গত নভেম্বরে পাকিস্তানের বাকি অংশের সঙ্গে কুররামকে সংযোগকারী প্রধান সড়কে একের পর এক অতর্কিত হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়। সহিংসতার কারণে রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যায়, যা প্রতিদ্বন্দ্বী সম্প্রদায়ের সশস্ত্র লোকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কর্তৃপক্ষ সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেছে কিন্তু শত্রুতার অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সরকারের মুখপাত্র মুহাম্মাদ আলি সাইফ বলেছেন, সরকার এসব মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করছে। তবে এটুকু আশ্বস্ত করতে চাই যে ওষুধের অভাবের কারণে এটি ঘটেনি। ওই এলাকায় এসব শিশুদের মৃত্যু নিয়মিত ছিল। এ বিষয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে প্যারাচিনারে ওষুধ পাঠানোর জন্য ‘অবিলম্বে পদক্ষেপ’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কুররাম তহসিলের চেয়ারম্যান আগা মুজামিল জানান, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে প্যারাচিনারের বাসিন্দারা মৌলিক সেবা পাচ্ছেন না। এর ফলে ১০০টিরও বেশি শিশু চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছে। কুররামের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, গ্র্যান্ড জিরগা জেলা সফর করে পুরোনো আদিবাসী বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সড়ক পুনরায় চালুর জন্য শান্তি আলোচনা শুরু করা হয়েছে।
এদিকে প্যারাচিনার বাসিন্দাদের দুর্দশা তুলে ধরতে করাচির নুমাইশ চৌরাঙ্গি এবং লাহোর প্রেস ক্লাবের বাইরে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলেমিন নামের একটি সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো শতাব্দীকালের প্রাচীন এই আদিবাসী বিরোধের স্থায়ী এবং টেকসই সমাধান।
সময়ের আলো/আরএস/