ই-পেপার সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাপা কাগজের দর বাড়াতে পেপার মিলে অবৈধ মজুদ
প্রকাশ: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৫১ এএম  (ভিজিট : ৫২)
পাঠ্যবই ছাপার কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারের পাশাপাশি কোটি কোটি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে রাখে একটি সিন্ডিকেট। এই কাগজগুলো মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এগুলো দিয়ে পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ করা হয়। প্রতি বছর এই কাগজ এনে মজুদ করা হয় কারখানায়। তারপর বই ছাপার সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। আর সেই সুযোগে বেশি দামে বিক্রি করা হয় সরকারের কাছে।

সম্প্রতি পাঠ্যবই ছাপার কাগজ নিয়ে এমন আজব কারসাজির তথ্য সামনে এসেছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে নরসিংদীর মাস্টার সিমেক্স পেপার মিল লিমিটেড কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাসহ জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অভিযানে মিলের ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ পাঠ্যবই ছাপার কাগজ উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে কাগজ মজুদের দায়ে মিলটি জব্দ করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। মিলটির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তদন্তে নামেন সংশ্লিষ্টরা। নরসিংদীর পাশাপাশি গাজীপুরে মাস্টার সিমেক্সের আরেকটি মিল থেকেও জব্দ করা হয় পাঠ্যবই ছাপার আর্ট কার্ড।

রোববার সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন নরসিংদীর মাস্টার সিমেক্স পেপার মিলে দেখা যায়, মিলটির ভেতর ও বাইরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার রাত থেকে নরসিংদী পুলিশ লাইনের কয়েকজন রিজার্ভ পুলিশ সদস্য মাস্টার সিমেক্স পেপার মিল লিমিটেডের প্রধান ফটক ও ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে একটি গোডাউনের ভেতর অবস্থান করছেন।

শনিবার রাত ৮টার দিকে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. আবদুল হান্নান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছমা সুলতানা নাসরিনসহ সংশ্লিষ্টরা মিলটিতে পুনরায় তদন্তে আসেন। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মিলটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অভিযান চালান। অবৈধ মজুদের কারণে মিলটিতে পাহাড়া বসানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, শিগগির এই ঘটনার সুরাহা হয়ে যাবে। বই যেন যথাসময়ে বাজারে আসতে পারে এবং কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন কাগজ স্টক করে না রাখতে পারে সেই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এখানে (মাস্টার সিমেক্স পেপার মিল) কাগজের স্টক রয়েছে এমন অভিযোগে শুক্রবার রাতে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালীন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব দাশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাজমুস সাকিবসহ আরও কয়েকজন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ছাপার জন্য যত কাগজ দরকার অধিক মুনাফার আশায় তার চাইতে অনেক বেশি কাগজ মজুদ করে রেখেছিল মিলটি। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পরও কর্ণপাত করেনি তারা। শুক্রবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ও কয়েকজন সমন্বয়ক অভিযান চালিয়েছেন গাজীপুরের মাস্টার সিমেক্স পেপার মিলে। এসময় জব্দ করা হয়েছে পাঠ্যবই ছাপার আর্ট কার্ড। এরপর নরসিংদীতে মাস্টার সিমেক্সের পেপার মিলে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাস্টার সিমেক্স পেপার মিলের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে ৫০ জন সমন্বয়কসহ ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা আসেন। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমাদের সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের সংস্কারের অংশ হিসেবে আগের শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীরা এসব বই হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও ছাপাখানার মালিকদের ঢিলেমিতে আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১২ বছর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা। গত কয়েক বছরে বিপুলসংখক পাঠ্যবই ভারতে ছাপা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই পুরো ছাপার কাজ করছে। সবকিছু গুছিয়ে আওয়ামী লীগ আমলের দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার। কিন্তু নানা অজুহাতে বিভিন্ন ছাপাখানার মালিকরা গড়িমসি করছেন। প্রাথমিকের পাঠ্যবই ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপানো শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন পর্যন্ত মুদ্রণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি হতাশাজনক।

এমনকি কোনো কোনো প্রেস নিম্নমানের কাগজ ও কালিতে বই ছাপতে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের কাগজে ছাপানোয় প্রায় এক লাখ পাঠ্যবই ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফরাজী প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপানোয় প্রায় ৩০ হাজার কপি প্রাথমিকের পাঠ্যবই হাতেনাতে ধরে বাতিল করে এনসিটিবির মনিটরিং টিম। কাগজের গুণগত মান নিম্ন ও উজ্জ্বলতা কম হওয়ায় শোকজ করা হয় ফরাজী প্রেসকে। এ ছাড়া আরও চারটি প্রেসের ৭০ হাজার বই বাতিল করা হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close