ই-পেপার রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অর্থনৈতিক শুমারি
আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া নিয়ে সংশয়
প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:২৪ পিএম আপডেট: ২১.১২.২০২৪ ৮:৫১ পিএম  (ভিজিট : ২৪৫)
চলতি অর্থনৈতিক শুমারিতে আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য না পাওয়া নিয়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে জনগণ তাদের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে ভয় পাচ্ছেন। যা শুমারির সঠিক ফলাফল পেতে বাধা সৃষ্টি করছে। শনিবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ও ঢাকা জেলার সাভারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র উঠে আসে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চতুর্থবারের মতো এই অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করছে। প্রতি ১০ বছর পরপর এটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।  যা দেশের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। এবারের শুমারি শুরু হয়েছে ১০ ডিসেম্বর। ১৫ দিনব্যাপী এই শুমারি চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ শুমারির মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে। , যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় কাজে লাগবে।

সাভারের আশুলিয়া জোনাল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়ায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই গার্মেন্টস। গার্মেন্টস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কিছু কিছু গার্মেন্টসে ৪-৫ দিন যাওয়ার পরও কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি তথ্য পেতে বেগ পেতে হচ্ছে আয় ব্যয়ের হিসাব নিতে গিয়ে।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সুপারভাইজার সেলিনা আক্তার জানান, তিনি ৬ জন তথ্য সংগ্রহকারী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার দলের সদস্যরা মাঠে নেমে জনগণের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ এবং আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো। 

গাজীপুর জেলার শুমারি সমন্বয়কারী মুরশিদা ইয়াসমিন বলেন, তাদের দায়িত্বে ৮০০ জন তথ্য সংগ্রহকারী আছেন। প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও তারা দ্রুত সমাধান করেছেন। 

সেলিনা আক্তার এবং মুরশিদা ইয়াসমিন জানান, তথ্য সংগ্রহকারীরা মাঠে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও তারা একে অপরকে সহযোগিতা করছেন এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম হচ্ছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে, অনেক ব্যবসায়ী বা কর্মী তাদের আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন। সুজন, একজন কামার, তার ব্যবসা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বলেন, "আমার তিনজন কর্মী কাজ করেন, তাদের বেতন দিতে হয়। দোকানের ভাড়া এবং ইউটিলিটি বিলও দিতে হয়। তবে, ব্যবসা ভালো না হওয়ার কারণে, আমাকে বাসা থেকে টাকা এনে খরচ চালাতে হয়।" এমন অবস্থায় অনেকেই তথ্য দিতে সঠিকভাবে সম্মত হচ্ছেন না, যা শুমারির সঠিক ফলাফল পেতে বাধা সৃষ্টি করছে।

একই সমস্যা তুলে ধরেছেন রহিমা মিয়া  নামে একজন মুদি দোকানি। তিনি বলেন, আমার আয় নেই, বরং আমি লসে আছি। আপনি আমাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জেনে কি করবেন? সরকার কি আমাকে সাহায্য করবে?" রহিম মিয়ার মত, অনেক ব্যবসায়ীই তথ্য দিয়ে সরকার থেকে কোনো ধরনের সাহায্য পাওয়ার ভয়ে তাদের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দেন না।

নাজমা খাতুন, একজন গণনাকারী, বলেন, মাঠে তথ্য সংগ্রহের সময় প্রায়ই দেখা গেছে লোকেরা আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে ভয় পাচ্ছে। তবে, যখন তাদের বোঝানো হয় যে এই তথ্য আয়কর সংক্রান্ত নয়, তখন তারা সহযোগিতা করেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী ও গণনাকারীরা জনগণকে সঠিকভাবে বোঝান যাতে তারা সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আখতার জানান, শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সঠিক সময়ে এই শুমারির কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

শাকিল আখতার বলেন, এবারের শুমারিতে ৭০টিরও বেশি প্রশ্ন থাকবে, যার মধ্যে দেশের আর্থিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবারের শুমারিতে বিশেষ করে বিদেশী কর্মীদের পরিসংখ্যানও সংগ্রহ করা হবে, যাতে জানা যাবে, দেশে কতজন বিদেশী কর্মী কাজ করছেন, তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, এবং তাদের মধ্যে নারী-পুরুষের সংখ্যা কী।

এদিকে, ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, গবেষণা ও নীতির উন্নয়ন সংস্থা র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান বলেন, যদি সঠিক তথ্য সংগ্রহ না করা যায়, তাহলে এই তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না। বিগত সময়ে বিবিএসের অনেক তথ্য নিয়ে সন্দেহ ছিল। সুতরাং, তারা তাদের পূর্ববর্তী কাজ থেকে শিক্ষা নিতে পারছে না। সরকারের উচিত একটি স্বাধীন তথ্য কমিশন তৈরি করা যাতে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।

সময়ের আলো/এম 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close