উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে যেকোনো সময় তার দেশ ত্যাগের এই তারিখ পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎক।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, ম্যাডাম ৩০ ডিসেম্বর লন্ডন যাচ্ছেন। এটা ধরেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও শতভাগ বলাটা ঠিক হবে না। কারণ এখানে ম্যাডামের শারিরীক সুস্থতা জরুরি। সুস্থ না থাকলে এতো লম্বা জার্নি করা সম্ভব নয়; এটা বারবার বলা হচ্ছে বোর্ডের পক্ষ থেকে। তিনি সুস্থ থাকলে ৩০ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন বলে আশা করছি। অন্য কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্থগিতের মতো বিদেশ সফর পেছাতে পারে।
গেল সপ্তাহে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে ঢাকায় বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্থগিত করা হয়। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে গতকাল শনিবার আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
মেডিকেল বোর্ডের এই সদস্য জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে তিনটি দেশে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমে লন্ডন পরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যেতে হতে পারে। এছাড়াও সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করবেন খালেদা জিয়া। সবমিলিয়ে প্রায় এক মাস বিদেশ অবস্থান করবেন তিনি। এজন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ওমরাহ করতে পারেব বলে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেননি এই চিকিৎসক।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গুলশানের বাসায় চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে উনার চিকিৎসা চলছে। এই অসুস্থতার কারণে উনার বিদেশে যাওয়াটাও পিছানো হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাল্টি ডিসিপ্লানারি সেন্টারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। মুক্তির পর গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এই সংবর্ধনায় উপস্থিত হন খালেদা জিয়া।