প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:০৬ এএম (ভিজিট : ৫২)
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দলের প্রস্তাবিত একাধিক বিতর্কিত বিলে ভেটো দিয়েছেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের অভিশংসনের পর বৃহস্পতিবার তার এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও ঘনীভূত হলো। মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ইউনের ক্ষমতা স্থগিত হওয়ার পর দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী হান। এরপর থেকেই তার ক্ষমতার পরিধি নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। অভিশংসিত ইউনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হবে নাকি পুনর্বহাল করা হবে-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সাংবিধানিক আদালত।
এদিকে ৩ ডিসেম্বর সামরিক আইন ঘোষণা করে ইউন কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী পর্যায়ের কাজ করেছেন কিনা, সেটা নিয়ে তদন্ত করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে ইউনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পুলিশপ্রধান ও সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কমান্ডারকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হানকেও অভিশংসনের কথা ভেবেছিল। কারণ তিনি সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেওয়া থেকে ইউনকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হন। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশের ভারপ্রাপ্ত নেতার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়। হানের ভেটো দেওয়া ছয়টি বিলের মধ্যে চারটি উত্থাপিত হয়েছিল কৃষি ও মৎস্যশিল্পে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে।
এর মধ্যে চাল ব্যবস্থাপনা আইন বা গ্রেইন ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক চলছে। এই বিল অনুযায়ী, চালের মূল্য হঠাৎ কমে গেলে সরকারকে অতিরিক্ত চাল কিনতে হবে যাতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকে। হান এই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, এটি সরকারের ওপর মারাত্মক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।
আরেকটি বিতর্কিত বিল ছিল সাক্ষ্য মূল্যায়ন আইন বা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি টেস্টিমনি অ্যাপ্রেইজাল অ্যাক্ট। এটি প্রণীত হলে পার্লামেন্টারি শুনানির জন্য কারও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ও প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার আদেশ দিতে আইনপ্রণেতাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ইউনের সামরিক আইন ঘোষণার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য এই বিলটি প্রয়োজনীয় বলে দাবি করছে বিরোধী দল। তবে হান বলেছেন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করতে পারে এই আইন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ রয়েছে যে, এই বিলা অনুমোদিত হলে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত ও ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে হানের সমালোচনা করে ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতা ও মুখপাত্র নোহ জং মিউন বলেন, যদি দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদ্রোহে সহযোগিতা করেছেন, তবে আমরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করব। আশা করছি, তিনি সীমা ছাড়াবেন না।
ভেটো সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক নথিপত্র পরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ভেটো দেওয়া বিল অনুমোদন করাতে ৩০০ আইনপ্রণেতার পার্লামেন্টে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। ডেমোক্রেটিক পার্টি ও অন্যান্য ছোট বিরোধী দলের সম্মিলিত আসন সংখ্যা আছে ১৯২টি।