তাসকিন আহমেদের গোলায় ছত্রখান স্টাম্প, তাতে ওবেদ ম্যাকয় সাজঘরে ফিরতেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন। শুক্রবার সেন্ট ভিনসেন্টে ক্যারিবীয়দের চুনকাম করতে ওই ক্ষণটুকুরই অপেক্ষা ছিল। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান যেখানে ৮০, ওই ম্যাচে লড়াই-রোমাঞ্চ বলে কী আর থাকে?
এ তো ময়দানি লড়াইয়ে একটা দলের নিরঙ্কুশ প্রাধান্যের প্রমাণপত্র। অতি আনন্দের বিষয়, সেই দলটার নাম বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ? ক্রিকেটের এই সংস্করণে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারা খেলেছে নিজ আঙিনায়, ব্যাট-বলের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে এবার তাদেরই পরবাসী বানিয়ে ছেড়েছে টাইগাররা। আর্নস ভেলে যেভাবে প্রতিনিয়ত দাপট দেখিয়েছে লিটন দাসের দল, তাতে খুঁজেই পাওয়া যায়নি এক সময়ের পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
যাদের মুখোমুখি হতে ক্রিকেটের বনেদি দলগুলোও দুশ্চিন্তায় থাকত, এবার তাদের নিয়ে টাইগাররা রীতিমতো ছেলেখেলাই করেছে। নিজেদের অর্জনের ঝুলি সমৃদ্ধ করার ধাপে ধাপে ক্যারিবীয়দের চুনকামের ইতিহাস গড়েছে তারা। ‘চুনকাম’, ধবলধোলাই কিংবা হোয়াইটওয়াশÑযেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট অভিধানে এই সফর আলাদা জায়গা নিয়েই থাকবে। হয়তো থাকবে এই প্রজন্মের (দল) উত্থানগাথা হয়ে।
২০০৯ সালে এই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেই দুটি ইতিহাস গড়েছিল টিম বাংলাদেশ। প্রথমবার বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় এবং প্রতিপক্ষকে চুনকাম করা। মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, তামিমদের প্রজন্ম সেবারই জানিয়েছিল, আগামীর চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা তৈরি। ১৬ বছরের পরিক্রমায় সেই প্রজন্ম প্রায় অস্তগামী। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটে দুশ্চিন্তার একটা জায়গা ছিল। শুক্রবারের পর জায়গাটা কিছু হলেও ছোট হয়ে এসেছে। রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, তানজিদ হাসান, শেখ মেহেদী, হাসান মাহমুদরা জানিয়ে দিয়েছেন, অনাগত দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পথ দেখানোর জন্য তারা তৈরি।
সাম্প্রতিক সময়ে চরম উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলা টাইগাররা শেষটায় কী অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতাই না দেখাল। একই ভেন্যু, একই প্রতিপক্ষ, পরপর তিন ম্যাচে জয়। সেটাও ম্যাচকে ম্যাচ দাপটের মাত্রা বাড়িয়ে। অনেকটা ভাগ্যের জোরেই ৭ রানের জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে সক্ষম হয়েছিল লিটন ব্রিগেড, বুধবার তারা সিরিজ জয়ের উৎসব করে ১২৯ রানের মামুলি পুঁজি নিয়েও ২৭ রানের জয়ে। ওতেই তৈরি হয়ে চুনকামের মঞ্চ। ১৮৯ রানের বড় পুঁজি গড়ে টাইগার ব্যাটাররা জানিয়ে দেয়, এটা তাদেরই ম্যাচ।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬ ছক্কার রেকর্ড গড়ে ৪১ বলে ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন জাকের আলী। বিধ্বংসী ইনিংসের সুবাদে ম্যাচসেরাও তিনি। অথচ রানআউট হয়ে গেছেন ভেবে একটা সময় সাজঘরেই ফিরে গিয়েছিলেন এই কিপার-ব্যাটার। পরে আম্পায়াররা ডেকে আনেন তাকে, সেই থেকেই শুরু জাকের ঝড়, তাতে উথালপাথাল ক্যারিবিয়ান সাগর। পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদী হাসান মিরাজও ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু সবাই ঢাকা পড়ে গেছেন জাকেরের ছায়ায়।
তবু বোলারদের কৃতিত্ব প্রাপ্য। বিশেষ করে দুই স্পিনার শেখ মেহেদী (২/১৩) আর রিশাদ হোসেনের (৩/২১)। দুজনেই ছিলেন অসাধারণ। তিন পেসার তাসকিন আহমেদ (২/৩০), হাসান মাহমুদ (১/৯) আর তানজিম হাসানও (১/৩১) কম যাননি। ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানেই অলআউট ক্যারিবীয়রা। সিরিজজুড়েই বোলারদের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। প্রতিটি ম্যাচেই স্বাগতিকদের অলআউট করেছে। শেষটায় জাকের নায়ক হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে চুনকাম করার মূল নায়ক আসলে বোলাররাই। তাদের হাত ধরেই প্রতিপক্ষকে তাদেরই মাঠে তৃতীয়বার চুনকামের ইতিহাস রচিত।
সময়ের আলো/আরএস/