ই-পেপার শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্যাস লিকেজ থেকে লাভ লীন রেস্তোরাঁয় আগুনের সূত্রপাত
প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৩০ এএম  (ভিজিট : ৫৬)
রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের শাহ মখদুম রোডের লাভ লীন রেস্তোরাঁয় গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।

একই সঙ্গে ছয়তলা এই ভবনটিতে কোনো ধরনের অগ্নি নিরাপত্তাসামগ্রী বা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণই ছিল বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এই ঘটনায় ভবন থেকে জীবিত ৭ জনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুরুষ, ছয়জন নারী ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করে সংস্থাটির কর্মীরা। 

বহুতল এই ভবনটি আবাসিক হলেও সেখানে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর রেস্তোরাঁ মালিক কিংবা ভবন মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আলামত নষ্ট করার দায়ে ওবায়দুল নামে রেস্তারাঁর একজন স্টাফকে আটক করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল সে। তাই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনও রেস্তোরাঁ কিংবা ভবন মালিককে পাওয়া যায়নি। তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ চেষ্টা করছে।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে লাভ লীন বাংলা রেস্টুরেন্টে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একে একে ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। টানা চার ঘণ্টা ১৩০ জন ফায়ার ফাইটার চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টা ২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা গেছে, গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। রেস্তোরাঁর কিচেনে গ্যাস সিলিন্ডারে লিকেজ থাকতে পারে, সেই লিকেজ থেকে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। তা ছাড়া গ্যাস লিকেজের কারণে নিচের ফ্লোরগুলোতে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল, সেখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ভবনে অনেক পেট্রোলিয়াম দ্রব্যাদিও ছিল। ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ছিল লাভ লীন বাংলা রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় একটি জিমনেশিয়াম এবং বিউটি পার্লার, ওপরের তলায় আরও একটি জিমনেশিয়াম ছিল এবং ভবনের ওপরের তলায় মানুষের বসবাস ছিল। ভবনের ছয় তলা টিনশেড করা ছিল।

আগুন নির্বাপণের পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা ভবনটিতে ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ইক্যুইপমেন্ট পাইনি। আমাদের জানা মতে, আমরা ভবনটিতে নোটিস দিয়েছিলাম। এখানে ফায়ার সেফটি প্ল্যানও নেই। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে আরও তথ্য দিতে পারব।

সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো অনুমোদন ছিল কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কী অনুমোদন ছিল আমাদের দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগুনের শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান, আগুন ‘ডেভলপমেন্ট স্টেজে’ চলে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এটা গ্যাসের লিকেজ থেকে যেহেতু হয়েছে, সুতরাং নিচের ফ্লোরে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল। এখানে অনেক পেট্রোলিয়াম দ্রব্যাদি ছিল। ভবনটিতে রেস্টুরেন্ট, জিম, বিউটি পার্লার ছিল। ওপরে মানুষের বসবাস ছিল। ভবনটির ছয়তলাটি টিনশেড করা ছিল।’

অগ্নিকাণ্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটার একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। আমরা বাইরে থেকে বৈদ্যুতিক তারের কারণে ফায়ার টিটিএল (টার্ন টেবল লেডার) সেট করতে পারছিলাম না।’ তিনি বলেন, ভবনটি থেকে সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন নির্বাপণের পর ভেতরে তল্লাশি করে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা এখনও কোনো নিহতের সংবাদ পাইনি। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ‘তদন্তসাপেক্ষে’ বলা যাবে বলে মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল।
রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার হচ্ছিল, এটার অনুমোদন আছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলএনজি গ্যাসের চেয়ে সিলিন্ডার গ্যাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অল্পতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এসে দেখেছি নিচের তলা এবং দোতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। আর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অনুমোদনের বিষয়গুলো বিস্ফোরক অধিদফতর বলতে পারবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সিটি করপোরেশন দেখে। তারা বলতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ভবন মালিককে খুঁজেছি, পাইনি। আমাদের পরিদর্শকদের কাজই ভবন পরিদর্শন করে নোটিস দেওয়া। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তদন্তসাপেক্ষে বাদবাকি তথ্য নিশ্চিত হতে পারব।’

এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে আমাদের প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। পরে উত্তরা, টঙ্গী, বারিধারা, কুর্মিটোলা, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে ক্রমান্বয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।’

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close