১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার সংস্থার চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাত বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, আসামিরা ইসলামী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এই টাকা ঋণ হিসেবে নেন। পরে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলায় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী। তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের কথা বলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু বিনিয়োগ না করে ওই প্রতিষ্ঠান এস আলম ও তার বিভিন্ন ব্যবসায় ঋণ পরিশোধ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম ছাড়াও আছেন-সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তাফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, সাবেক পরিচালক খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান, সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, ইসলামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জিএম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, ব্যাংকটির বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাক্তাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাক্তাই শাখাপ্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অন্যান্য জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
এ ছাড়াও মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মালিক মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সে মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রেইনবো করপোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের মালিক এমএ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউসের মালিক এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউসের মালিক ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের মালিক আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউসের মালিক মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউসের মালিক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী এবং ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক কাজী মেজবাহ উদ্দিন।
মামলা বলা হয়, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এস আলম সংশ্লিষ্ট মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরোওয়ার চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে ওই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই না করে তা অনুমোদন করেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর জাল কাগজ তৈরি করে এই ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ। পরে এই ঋণ অনুমোদন করা হয়। যাচাই না করেই পরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই অনুমোদন করেন। প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে তা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
সময়ের আলো/আরএস