প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:২৯ এএম (ভিজিট : ৬২)
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন হেদায়েতের বার্তাবাহক হিসেবে। সে ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ হেদায়েতের মশাল নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর ওফাতের মাধ্যমে নবুয়তের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। দুনিয়াতে আর কোনো নবী-রাসুল আসবেন না। তবে নবীজির রেখে যাওয়া সেই ‘নবুয়তি দায়িত্ব’ পালন করবেন আলেম-ওলামাগণ।
এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে ওলামায়ে কেরাম হচ্ছেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দিনার ও দেরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তারা ইলম ও জ্ঞানের উত্তরাধিকারী বানান’ (আবু দাউদ : ৩৬৪১)। আর যাদেরকে নবুয়তের ইলম দেওয়া হয় তাদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন।’ (সুরা মুজাদালা : ১১)
আলেমরাই হচ্ছেন পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষ। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অন্যকে তা শেখায়।’ (তিরমিজি : ২৯০৭)
ওলামায়ে কেরাম হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ। এই হেদায়েতের বাতি যেদিন বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিন পৃথিবী অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওলামাদের দৃষ্টান্ত ওইসব তারকার ন্যায় যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যখন তারকাগুলো আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারাবার আশঙ্কা থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩/১৫৭)। অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম পৃথিবীতে না থাকলে মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। সুতরাং আলেমরা হচ্ছেন উম্মতের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা।
একজন আলেমের মৃত্যু উম্মতের জন্য ধ্বংসের কারণ। কেননা একজন আলেমের মৃত্যুতে উম্মতের জন্য যতটা দ্বীনি ব্যাপারে ক্ষতি হয় একটি গোত্রের সমস্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও সেই ক্ষতি হয় না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আলেমদের মৃত্যু এমন মুসিবত যার প্রতিকার নেই এবং এমন ক্ষতি যা পূরণ হয় না। আর আলেম এমন এক তারকা যে (তার মৃত্যুর কারণে যেন পৃথিবী) আলোহীন হয়ে যায়। একজন আলেমের মৃত্যু অপেক্ষা একটি গোত্রের মৃত্যু অতি নগণ্য।’ (বায়হাকি : ২/২৬৪)
সুতরাং আলেমরা দুনিয়াতে না থাকলে ইলমও দুনিয়াতে থাকবে না। কেননা আলেমদেরকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া থেকে ইলেম উঠিয়ে নেন। আর ইলেম যদি দুনিয়াতে না থাকে তা হলে মানুষ হেদায়েতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গোমরাহের দিকে ধাবিত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা (শেষ জামানায়) ইলেমকে এইভাবে উঠিয়ে নেবেন না যে, লোকদের অন্তর থেকে সম্পূর্ণ বের কওে নেবেন বরং তিনি ইলমকে এইভাবে উঠিয়ে নেবেন যে, এক এক করে ওলামায়ে কেরামদের উঠিয়ে নেবেন। আর যখন কোনো আলেম দুনিয়াতে অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা ওলামাদের পরিবর্তে অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে।’ (বুখারি : ১০০)
বর্তমানে না জানার কারণে আলেমদেরকে অনেক সময় অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হয়। অথচ আলেমদের সম্মান আল্লাহর কাছে এত বেশি যে, আসমান ও দুনিয়ার সব মাখলুক আলেমদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আলেমদের ওপর স্বয়ং আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ এবং আসমান ও জমিনের সব মাখলুক এমনকি পিঁপড়া আপন আপন গর্তে এবং মাছ পানির ভেতর আপন আপন পদ্ধতিতে রহমতের জন্য সর্বদা দোয়া করতে থাকে।’ (তিরমিজি : ২৬৮৫)
সময়ের আলো/আরএস/