প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:২৮ এএম (ভিজিট : ৪২)
বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক আছে। আর্থিক খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, এর মধ্যে ৪০টির মতো ব্যাংক ভালো করলেও বাকি ব্যাংকগুলোর অবস্থা সুবিধাজনক নয়।
নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, ব্যবস্থাপনা ও তারল্য-এ চারটি সূচকে প্রত্যাশিত মানদণ্ডের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোই ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। ব্যাংকিং খাতে কোনো দুর্বল প্রতিষ্ঠান থাকলে পুরো খাতই ঝুঁকির মাঝে থাকে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে। এর সমাধান হিসেবে খারাপ ব্যাংকগুলোকে ভালোগুলোর সঙ্গে একীভূত করা গেলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রায় ৯ মাস আগে ঋণ কেলেঙ্কারি, তারল্য সংকটে নাজুক দশায় পড়া আর্থিক খাতকে সঠিক পথে ফেরাতে দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বা মার্জারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে প্রথমে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তবে আকস্মিকভাবে সরকার বদলের পর সে উদ্যোগ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সময়ের আলো থেকে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ব্যাংকিং খাতে যে চরম তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থার সংকট দেখা দেয়। সে সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর দিকেই বেশি নজর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এ জন্য আপাতত ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক বা একাধিক ব্যাংক একীভূত করা হলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো একীভূত করে কোনো ভালো ফল পাওয়া যাবে না। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে অবশিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর শেয়ার ছেড়ে বিরাষ্ট্রীয়করণ করা যেতে পারে।
আমরা মনে করি, ব্যাংকিং সেক্টরকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে। এর আগে ঋণখেলাপিদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যেসব আইনি সংস্কার বা পরিবর্তন করা হয়েছে, তা বাতিল করে আইনগুলো পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পক্ষে আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কিছু করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। খেলাপি ঋণ সমাজে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে ব্যাংক একীভূতকরণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করলে সুফল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিত ও নীতি সংস্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যাশা করি, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।