একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি করতে চায় বাংলাদেশ। যাতে ভবিষ্যতে দুইপক্ষের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। মিসরের কায়রোতে উন্নয়নশীল আট মুসলিম দেশের জোট ডি-৮ সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে এমন বার্তা দেন।
বৈঠক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার বলা হয়, ডি-৮ সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি ইস্যুতে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত পোষণ করেন। দুইপক্ষই নিজেদের মধ্যে চিনি শিল্প এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উভয়েই বৈঠকে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করতে আলোচনা করেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পররাষ্ট্র নীতিতে সার্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সার্ক আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার বিষয়। আমি সার্কের একজন বড় ফ্যান। সার্ককে উজ্জীবিত করতে আমি কাজ করে যাব। আমি সার্কের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান চাই, যদি তা সম্ভব না হয় তবে অন্তত সার্ক রাষ্ট্রের প্রধানদের মধ্যে একটি ফটো সেশন চাই, যা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে দুইপক্ষের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে একাত্তরে অনিষ্পন্ন ইস্যুগুলো যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় এজন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে তা নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ভারত মিলে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে একাত্তরের বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি ঘটেছে কিন্তু তারপরও অনিষ্পন্ন কোনো ইস্যু থাকলে পাকিস্তান তা বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একবারের জন্য বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি ঘটাতে পারি তবে তা খুব ভালো কাজ হবে। এই সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও ইসলামাবাদের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাকিস্তান ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক গড়তে চায়।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দীকি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দীকী।
এদিকে, বৈঠক নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের প্রকাশিত বিবৃতিতে একাত্তরের অনিষ্পন্ন ইস্যু এবং সার্ক নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দেশের সম্পর্কের নতুন নতুন বিষয় উন্মোচিত করতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ইস্যুতে উভয়পক্ষের মধ্যে যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। কেমিক্যালস, সিমেন্ট ক্লিনকারস, চিকিৎসাসেবায় সার্জিক্যাল পণ্য, চামড়াজাত পণ্য এবং আইটি খাতে যেসব সম্ভাবনা রয়েছে তা দুইদেশ কাজে লাগাতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ভ্রমণের সুবিধার্থে সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা চালানের শতভাগ শারীরিক পরিদর্শনের শর্ত প্রত্যাহার এবং পাকিস্তানি যাত্রীদের যাচাই-বাছাই করার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে বিশেষ নিরাপত্তা ডেস্ক বিলুপ্ত করা। পাকিস্তানি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য অতিরিক্ত ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা দূর করার জন্যও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক ইতিবাচক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উভয়েই পারস্পরিক স্বার্থের সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও গভীর করতে সম্মত হন।
সময়ের আলো/আরআই