দেশে কোনো স্বাস্থ্যনীতি না থাকায় জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়নি। বরং স্বাস্থ্য খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এই অবস্থায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র : স্বাস্থ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক ডা. কাজী সাইফউদ্দীন বেননুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানের দর্শন এই শ্বেতপত্রে প্রতিফলন দরকার ছিল। আমি রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছি তার জন্য একটা নির্দেশনা খুব দরকার। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি খুঁজে বের করা জটিল কঠিন কোনো কাজ নয়। শ্বেতপত্রের কাজ হওয়া উচিত, বৈষম্যের কারণ খুঁজে বের করা। শ্বেতপত্রের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করি।
সভায় মানবাধিকার কর্মী ও কবি ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন যে, বাজারই সবকিছু ঠিক করে। করোনাকালে আমরা নিজেরাই ভ্যাকসিন বানাতে পারতাম, কিন্তু টেস্ট কিটই বানাতে পারিনি। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দরবেশের বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের সঙ্গে খাদ্যব্যবস্থা জড়িত। তাই কৃষি খাত ঠিক না করলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিক করতে পারবেন না। শুধু দুর্নীতি ধরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক করে ফেলা যাবে না, খাদ্য ও কৃষি ঠিক করতে হবে। গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের কোনো স্বাস্থ্যনীতি নেই। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫-৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের বরাদ্দ এক শতাংশের কম। এরপর আবার দুর্নীতি। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।’
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সবকিছু এলোমেলো। সবাই সেখানে পদায়ন নিয়ে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের যে বর্তমান দুরবস্থা তা দূর করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশে পুষ্টির যে ধারণা তা কিন্তু ওয়েল স্টাবলিশড না। আমরা যদি ইনফ্যান্ট নিউট্রিশনের দিকে তাকাই, আমাদের দেশে প্রসেস ফুডের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে পুষ্টির কনসেপ্টটা কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এখানে পুষ্টির ধারণা ভাত খাওয়ার পর ফল খাওয়ার পর সীমাবদ্ধ। তারপর আমিষের উৎসের জন্য মাছও সহজলভ্য না। আমাদের পুষ্টির মান নিশ্চিত করতে খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা জরুরি।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌফিক জোয়ার্দারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তৃতা করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. শারমিন নিলোর্মি, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের সদস্য সচিব ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের সদস্য ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান প্রমুখ।
সময়ের আলো/আরএস/